• ভয়াবহ বাজি বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৪ শিশু সহ মৃত সাত
    বর্তমান | ০১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: বাড়ির ভিতরেই বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ফের ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এবার পাথরপ্রতিমা বিধানসভার ঢোলাহাট থানা এলাকায় বাজি বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু হল একই পরিবারের সাতজনের। তার মধ্যে রয়েছে ৪ শিশু। ওই পরিবারের আরও একজন গুরুতর জখম হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

    সোমবার রাত সাড়ে আটটা। রায়পুরের তৃতীয় ঘেরিতে একটি একতলা বাড়িতে আচমকাই আগুন লেগে যায়। বাড়ির ভিতরেই রয়েছে বাজি কারখানা ও গুদাম। বাসন্তী পুজো উপলক্ষ্যে সেখানে বাজি বিপুল পরিমাণে বাজি মজুত ছিল। তার জেরেই দাহ্যবস্তু মজুত থাকায় নিমেষে আগুন বিধ্বংসী আকার নেয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় ওই বাড়িতে। পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। এলাকাবাসীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। খবর যায় ঢোলাহাট থানায়।  যদিও পুলিস আসার আগেই আগুন ছড়িয়ে যায় বাড়ির রান্না ঘরে। তাতেই অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আগুনের জেরে রান্নাঘরে থাকা দু’টি সিলিন্ডার পরপর ফেটে যায়। দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে গোটা বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিস যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু,  তাতেও কোনও লাভ হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে জল দিয়েও লাভ হয়নি। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। স্থানীয়রা বালতিতে করে জল দিয়ে আগুন নেভাতে সাহায্য করেন পুলিসকে। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের কয়েকটি ইঞ্জিন। তবে ওই বাড়ি ঘিঞ্জি গলির মধ্যে হওয়ায় আগুন নেভাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে দমকলকে। এরপরে ভস্মীভূত বাড়ির ভিতর থেকে ঝলসে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিস। জখম ব্যক্তিকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। সুন্দরবন পুলিস জেলা সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে ঢোলাহাট থানা। পুলিস সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘শিশু সহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম অরবিন্দ বণিক (৬৫), প্রভাবতী বণিক (৮০), শান্তনা বণিক (২৮), অর্ণব বণিক (৯), অনুষ্কা বণিক (৬), অস্মিতা বণিক (৮ মাস), অঙ্কিতা বণিক (৬ মাস)।

    এলাকাবাসী জানিয়েছেন, যে বাড়িতে আগুন লেগেছে তার গৃহকর্তার নাম চন্দ্রকান্ত বণিক। তাঁর স্ত্রীর নাম শান্তনা। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। চন্দ্রনাথবাবুর বাজির ব্যবসা রয়েছে। বাড়ির ভিতরেই তৈরি হয় বাজি। প্রতিবছরই বাসন্তী পুজো উপলক্ষ্যে এলাকাবাসী তাঁর থেকে বাজি কেনেন। সেই উপলক্ষ্যেই বাড়িতে বাজি মজুত করা ছিল বলে মনে করছে পুলিস। বিস্ফোরণের শব্দ বহুদূর থেকে শোনা গিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। সিলিন্ডার ফাটার জেরে আশপাশের বাড়ি-ঘর কেঁপে ওঠে। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা জানিয়েছেন, বণিক পরিবারে ১১ জন সদস্যের বাস। তার মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে তিনজন শিশু ও একজন বৃদ্ধা রয়েছেন। বাকি সদস্যরা কে, কোথায় ছিলেন তা খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)