• রাজস্ব আদায় বাড়াতে এ বার ইটভাটার জন্য পোর্টাল রাজ্যে
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৫
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    রাজ্য সরকার রাজস্ব ঘটতি মেটাতে বৈধ ইটভাটাগুলি থেকে রয়্যালটি আদায় নিশ্চিত করতে এ বার পোর্টাল চালু করছে। প্রতিটি বৈধ ইটভাটাকেই বাধ্যতামূলক ভাবে এই নয়া পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। সহজ হবে জেলার অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করা। সরকারকে এর মাধ্যমেই মেটাতে হবে রয়্যালটির টাকা। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে রাজ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি।

    আর অবৈধ? আনুমানিক প্রায় দশ হাজার। গত প্রায় ২০ বছরে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একটি ইটভাটাকেও ছাড়পত্র দেয়নি। এতদিন ‘বাংলার ভূমি’ পোর্টালে বৈধ ভাটাগুলিকে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য। ওই পোর্টালের মন্থর গতির অজুহাত তুলে অর্ধেকেরও বেশি বৈধ ইটভাটার মালিক নাম নথিভুক্ত করেননি। দেননি রয়্যালটির টাকাও।

    সরকারি হিসেবে, বিগত ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে রাজ্য ইটভাটা থেকে রয়্যালটি আদায় হয়েছিল ৩৯ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, ঠিকমতো রয়্যালটি আদায় হলে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

    নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে গ্রামীণ আবাস যোজনার মতো অনেকগুলি প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করেছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে চলতি আর্থিক বছরে রাজস্ব সংগ্রহের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট করে দেওয়া হয় ১১৬০ কোটি টাকার বেশি। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে জেলাগুলিকে নির্দিষ্ট টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়।

    এর মধ্যে পূর্ব বর্ধমানকে ২১৩ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা, বীরভূমকে ২৬৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা, পশ্চিম বর্ধমানকে ১৩১ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। এই তিন জেলাতেই বালি, ইটভাটা ও পাথর খাদানের রমরমা ব্যবসা। যার একটা বড় অংশ এখনও আদায় হয়নি। তাই রাজ্য সরকার বৈধ ইটভাটা থেকে রয়্যালটি আদায় নিশ্চিত করতে পৃথক পোর্টাল তৈরির পরিকল্পনা করেছে বলে দাবি ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কর্তাদের।

    বৈধ ইটভাটার পাশাপাশি চিন্তা রয়েছে বেআইনি ইটভাটা নিয়েও। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বেআইনি বালি–পাথর খাদান থেকে ইটভাটা নিয়ে নবান্ন থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এমনকী এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বেআইনি ইটভাটাগুলিকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তারও পথ খুঁজছে রাজ্য।

    রাজ্যের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমার বলেন, ‘বাংলার ভূমি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে ইটভাটার মালিকদের সমস্যা হচ্ছিল বলে জানানো হয়েছিল। যাতে সহজে নাম নথিভুক্ত করা যায়, সে জন্য নতুন পোর্টালে গোটা প্রক্রিয়াকেই সরলীকরণ করা হচ্ছে। রয়্যালটির টাকা কত বকেয়া রয়েছে, তা–ও জানা সহজ হবে। কেন্দ্রীয় ভাবে নজরদরি চালানো যাবে, কোন ইটভাটা মালিক সরকারকে রয়্যালটির টাকা দিচ্ছে অথবা দিচ্ছে না।’

  • Link to this news (এই সময়)