এই সময়: বাগুইআটির বাসিন্দা সুমন কর্মকার মেয়ের জন্মদিনে সল্টলেকের একটি নামী রেস্তোরাঁয় সপরিবার ডিনার করতে গিয়েছিলেন। পেমেন্টের সময়ে দেখেন বিল তাঁর আন্দাজের তুলনায় অনেকটাই বেশি। বিলটি খুঁটিয়ে দেখেন তাতে জিএসটির পরেও এস চার্জ নামে কয়েকশো টাকা যোগ করা হয়েছে। প্রশ্ন করায় ওয়েটার জানান সেটা সার্ভিস চার্জ।
ম্যানেজার এসে বলেন, এই টাকা ওয়েটাররা পান। তাঁদের রেস্তোরাঁয় তেমনই নিয়ম। সুমনের বক্তব্য ছিল, তিনি কত টাকা টিপস দেবেন, তা নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। জোর করে কেন চাপানো হবে? তবে কথায় কোনও কাজ হয়নি। শেষে পুরো বিল মিটিয়েই বেরোতে হয়। ঘটনাটি ২০২০ সালের। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁর থেকে পরে কুড়ি হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করেন সুমন।
সার্ভিস চার্জের নামে বিলে বাড়তি টাকা আদায় বেশির ভাগ রেস্তোরাঁতেই যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সেন্ট্রাল কনজ়িউমার প্রোটেকশন অথরিটির (সিসিপিএ) কাছে গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে সিসিপিএ একটি গাইডলাইন জারি করে জানিয়ে দেয়, কোনও অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁ সার্ভিস চার্জ বিলের সঙ্গে যোগ করতে পারবে না।
এই গাইডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করেই দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছিল ন্যাশনাল রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এবং ফেডারেশন অফ হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতিভা সিং দু’টি সংগঠনের আর্জি খারিজ করে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও রেস্তোরাঁ বিলের সঙ্গে কোনও অবস্থায় অন্য কোনও নামে বাড়তি অঙ্ক যোগ করতে পারবে না। এই বিষয়ে সিসিপিএ কঠোর নিয়ম জারি করতে পারবে বলেও নির্দেশে বলা হয়েছে। মামলা করার জন্য সংগঠন দু’টিকে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ-হোটেলগুলি বিভিন্ন নামে সার্ভিস চার্জ হিসেবে যে ‘বাধ্যতামূলক বিল’ আদায় করে ওই শব্দগুলি সরকার অনুমোদিত তো নয়ই বরং তা বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণামূলক। এই বিষয়ে সিসিপিএর জারি করা গাইডলাইন অপরিবর্তিত থাকবে। প্রয়োজনে তারা আরও কড়া নির্দেশ জারি করতে পারে।
রেস্তোরাঁ এবং হোটেলের সর্বভারতীয় সংগঠনের বক্তব্য ছিল, ওয়েটার এবং কর্মীদের জন্য টিপস হিসেবে সার্ভিস চার্জ আদায় ৮০ বছরের পুরোনো নিয়ম এবং শ্রমচুক্তির অংশ। আদালত এই যুক্তি নস্যাৎ করে দেয়। পাল্টা প্রশ্ন তোলে, এর কোনও প্রমাণ আছে যে এই টাকা কর্মীদের কল্যাণেই খরচ হয়? বরং আদালত বলে, বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এসজি, এস চার্জ, এসইআর, ভিএসসি— এমন বিভিন্ন নামে বাড়তি টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বিলের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় ভাবে যেন এগুলি জুড়ে দেওয়া না হয়। কোনও রেস্তোরাঁ যদি তা করে তা হলে ‘কনজি়উমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট-২০১৯’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একমাত্র ক্রেতারা চাইলেই রেস্তোরাঁ আলাদা বিলে স্টাফ কনট্রিবিউশন বা স্বেচ্ছামূলক টিপস নামে বিল করতে পারবে।