• চড়া সুদের ফাঁদে পাচারের কিডনি যেত আফ্রিকাতেও!
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৫
  • আশিস নন্দী, অশোকনগর

    এ রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতিবেশী রাজ্য তো বটেই, কিডনি বিক্রি চক্রের মাধ্যমে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রহীতাদের কাছেও কিডনি পৌঁছে যেত বলে তদন্তে জানতে পেরেছে অশোকনগর থানার পুলিশ। তাই, চড়া সুদে ঋণের আড়ালে কিডনি বিক্রি চক্রের একেবারে গোড়া থেকেই এর সাপ্লাই লাইনকে কেটে ফেলতে সচেষ্ট হয়েছেন তদন্তকারীরা।

    একদিকে যেমন সুদখোর ব্যবসায়ী বিকাশ ঘোষ, মূল পান্ডা গণপতি জানা ওরফে অমিতের মতো লিঙ্কম্যানদের জেরা করছে পুলিশ, তেমনই বিদেশ এবং এ রাজ্যের কিডনি গ্রহীতারাও রয়েছেন তদন্তকারীদের স্ক্যানারে। গোড়া থেকে এই সাপ্লাই লাইন কাটার জন্য সোমবার ধৃতদের দফায় দফায় জেরা করেছেন বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি।

    ধৃতদের জেরা করে কিডনি বিক্রির সাপ্লাই লাইনের কয়েকজন এজেন্টদের কার্যকলাপ জানতে পেরেছে অশোকনগর থানার পুলিশ। পুলিশের মতে, সুদখোর ব্যবসায়ীদের হয়েই একেবারে নিচু স্তরে কাজ করত সাপ্লাই লাইনের চার, পাঁচজন এজেন্ট। তাদের কাজ ছিল চড়া সুদ হলেও ঋণ নেবেন, এমন অসহায় মানুষদের জোগাড় করা।

    পরে এরাই ওই অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে আসত সুদখোর ব্যবসায়ীদের কাছে। ঋণ নেওয়ার পর এরাই ব্যবসায়ীদের হয়ে প্রতিদিন সুদের টাকা কালেকশন করত। কালেকশনের টাকার পরিমাণ অনুযায়ী সাপ্লাই লাইনের এই এজেন্টরা কমিশন পেত।

    যে ঋণ গ্রহীতারা পর পর কয়েকদিন সুদের টাকা দিতে পারতেন না, কালেকশন এজেন্টদের নিয়ে তাদের বাড়িতে চড়াও হতো সুদখোর ব্যবসায়ীরা। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, প্রথম দিকে হুমকি দেওয়া হতো। পরে, ঋণ গ্রহীতাদের মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেড়ে নিত তারা। এর পরেও যদি কেউ সুদের টাকা দিতে পারতেন না, তখনই অসহায় ঋণ গ্রহীতাদের উপরে চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রিতে বাধ্য করা হতো বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিডনি বিক্রি করাতে পারলে এক একজন সুদখোর ব্যবসায়ী কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা পেত।

    আন্তর্জাতিক ব্ল্যাক মার্কেটের তুলনায় কলকাতা–সহ সংলগ্ন এলাকায় কিডনির দাম তুলনায় অনেকটাই কম। আইনের ফাঁক গলে সহজেই মেলে কিডনি। তাই মূলত আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গরিব দেশ থেকে গ্রহীতারা যোগাযোগ করতেন এ রাজ্যের কিডনি বিক্রির দালালদের সঙ্গে। তদন্তে ঘানা, কঙ্গো, কম্বোডিয়া–সহ প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের কয়েকজন গ্রহীতার নামও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এ ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা–সহ একাধিক রাজ্যের গ্রহীতাদের নাম।

    প্রতিটি জেলায় কিডনি পাচারের আলাদা আলাদা টিম থাকলেও তারা দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সূত্রে এক সুতোয় বাঁধা ছিল। পাশাপাশি পুলিশ জানতে পেরেছে, অশোকনগর থানা এলাকায় একাধিক সুদখোরের চাপে বিগত ৫-৭ বছরে কমবেশি ২৫ জন কিডনি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে অনেকেই সুদখোর ব্যবসায়ীদের চাপে কিডনি দান করেছেন। আপাতত এই সাপ্লাই লাইন কাটতেই চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা।

    বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘আমি আবেদন করছি, সহজে ঋণ পেতে কেউ চড়া সুদে ব্যবসায়ীদের পাতা ফাঁদে পড়বেন না। যদি কেউ চড়া সুদ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে, সে ক্ষেত্রে পুলিশকে জানান।’

  • Link to this news (এই সময়)