• হারানো স্রোত ফিরেছে কাঁসাইয়ে, মিলছে ইলিশ, উপকৃত চাষিরাও
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    এক সময়ে পাঁশকুড়ায় কংসাবতী নদীতে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হতো। পণ্য বয়ে নিয়ে চলত জলযান। জোয়ারের জলে মিলত ইলিশও। সেই নিউ কাঁসাই নদী মজে যাওয়ায় বহু বছর আগে পাঁশকুড়া এলাকায় ওল্ড কাঁসাই নদীতে জোয়ারের জল আসা বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ দশক আগে কংসাবতী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইলিশের ঝাঁকও।

    কয়েক বছর আগে সেচ দপ্তরের উদ্যোগে নিউ কাঁসাই নদীর ২১ কিলোমিটার সংস্কার করা হয়। নদী সংস্কারের জেরে এখন জোয়ারের জল নিউ কাঁসাই পেরিয়ে ঢুকছে ওল্ড কাঁসাইয়ে। শুখা মরশুমে জোয়ারের জলে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কংসাবতী নদীতে মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে ইলিশও। প্রায় ষাট বছর আগে হারিয়ে যাওয়া স্রোত ফিরে আসা রাজ্য সরকারের কৃতিত্ব বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ।

    পাঁশকুড়ার গড় পুরুষোত্তমপুর থেকে তমলুক পর্যন্ত কংসাবতী নদীর প্রবাহ বেহুলা নদী নামে পরিচিত ছিল। জানা গিয়েছে, ১৬৬৫ সালে মহিষাদলে জলাভাব দেখা দেয়। জল সঙ্কট দূর করতে মহিষাদলের রাজা কল্যাণ রায় গড় পুরুষোত্তমপুর থেকে একটি খাল কেটে ক্ষীরাই খালের সঙ্গে যুক্ত করে ময়নার মধ্য দিয়ে সেই জল হলদি নদীতে এনে ফেলেন।

    পরবর্তীকালে ওই অংশটি ‘নিউ কাঁসাই’ নামে পরিচিত হয়। মজে গিয়ে জনপদে পরিণত হয় বেহুলা। আগে নিউ কাঁসাই হয়ে হলদি নদীর জোয়ারের জল ওল্ড কাঁসাই বা মূল কংসাবতী নদীতে ঢুকত। সেই জল দিয়ে নদী লাগোয়া পাঁশকুড়া এবং ময়না এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে কৃষিকাজ হতো। শুখা মরশুমেও চাষে জলের অভাব হতো না। সেই সময়ে হলদি নদী থেকে ইলিশের ঝাঁক কংসাবতী নদীতে ঢুকত। দীর্ঘদিন সংস্কার না–হওয়ায় নিউ কাঁসাই মজে গিয়েছিল। ফলে জোয়ারের জল আসাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

    ২০২১ সালে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিউ কাঁসাই নদীর রামচন্দ্রপুর থেকে ঢেউভাঙা পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করে সেচ দপ্তর। নিউ কাঁসাই সংস্কার হওয়ার পরে নদীর গভীরতা অনেক বেড়ে যায়। ফলে এখন প্রতিদিন জোয়ারের জল নিউ কাঁসাইয়ের পাশাপাশি ওল্ড কাঁসাইয়ের একটা বড় অংশেও ঢুকছে। নদীতে পর্যাপ্ত জোয়ারের জল আসায় পাঁশকুড়া এবং ময়না এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে কৃষিকাজে সেচের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এলাকার মৎস্যজীবীদের জালে মাঝেমধ্যেই উঠছে ইলিশ। এতে খুশি এলাকার মানুষজন।

    কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘নিউ কাঁসাই সংস্কার হওয়ার নদীতে পর্যাপ্ত জোয়ারের জল ঢুকছে। নদী থেকে একাধিক খাল দিয়ে জোয়ারের জল বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে নদী লাগোয়া পাঁশকুড়া এবং ময়না এলাকায় কৃষিকাজে সেচের সমস্যা দূর হয়েছে।’

    পাঁশকুড়ার শ্রীরামপুর গ্রামের মৎস্যজীবী হরিপদ দোলই বলেন, ‘নিউ কাঁসাইয়ে প্রতিদিন মাছ ধরি। জোয়ারের সময়ে জালে মাঝেমধ্যে ইলিশ ধরা পড়ে। বহু বছর পরে কাঁসাইয়ে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। নদী সংস্কারের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।’

    পাঁশকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুজিত কুমার রায় বলেন, ‘রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের উদ্যোগে ৮৪ কোটি টাকা খরচ করে নিউ কাঁসাই (কংসাবতী) নদী সংস্কার করা হয়েছিল। সেই কাজের সুফল এখন মিলছে। গরমেও চাষের জন্য জলের অভাব হচ্ছে না। কাঁসাইয়ে ইলিশের আগমন আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা।’

  • Link to this news (এই সময়)