এই সময়, আলিপুরদুয়ার: টাকা তুমি কার? দিনভর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হিমশিম খেল জেলা পুলিশ। তাও হাজার কিংবা লক্ষের নয়, পুরো এক কোটির মালিকানা! এত বিপুল অঙ্কের টাকা আবার হাতে এসেছে লটারির মাধ্যমে। পঁচিশ সিরিজের মাত্র কয়েকটি টিকিটের মধ্যে দেড়শো টাকার বিনিময়ে কেউ একজন কোটিপতি হওয়ার পরে সোমবার শুরু হয় প্রবল ঝামেলা।
আদতে ওই মহামূল্য টাকার অঙ্ক কার ভাগ্যে জুটেছে, তাই নিয়ে দিনভর চর্চা শুরু হয় আলিপুরদুয়ার শহরে। এদিন সকালে কোটি টাকার দাবি নিয়ে দু’পক্ষ হাজির হয় থানায়। তলব করা হয় এজেন্ট থেকে শুরু করে খুচরো টিকিট বিক্রেতাদেরও। যেখানে টিকিট মেলানো হয়েছিল সেই টিকিট বিক্রেতাকেও ডেকে পাঠায় পুলিশ।
সোমবার লটারিতে কোটি টাকা জিতেছেন বলে দাবি করে থানায় হাজির হন আলিপুরদুয়ারের ঘাগড়া এলাকার নারু চৌপথির বাসিন্দা সঞ্জীব ভগত নামে এক ব্যক্তি। যিনি পেশায় আবার একজন দিনমজুর। সঞ্জীবের কথায়, ‘আমি কাজ থেকে ফেরার পরে জেলা হাসপাতাল মোড়ের একটি লটারির দোকান থেকে পঁচিশ সিরিজের টিকিট কাটি। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময়ে নারু চৌপথিতে মানিক বর্মনের দোকানে টিকিট মেলাতে গেলে তিনি আমাকে হাতে তিন হাজার টাকা দিয়ে টিকিটটি নিয়ে নেন। সে সময়ে নেশার ঘোরে ছিলাম বলে সব কিছু খতিয়ে দেখিনি। সকালে আমাকে বন্ধুরা জানায় আমি কোটি টাকা জিতেছি। কিন্তু মানিক আমাকে ওই আর টিকিট ফেরত দিচ্ছেন না। তাই পুলিশের কাছে এসেছি।’
অভিযোগ পেয়ে থানায় ডেকে আনা হয় লটারি বিক্রেতা মানিক বর্মনের স্ত্রী মনা বর্মনকে। কারণ, মানিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায় চলাফেরা করতে পারেন না। এরপর শুরু হয় জেরা পর্ব। তার মধ্যেই ‘কাহানি মে নয়া টুইস্ট’ আসে ঘাগড়া এলাকার বাসিন্দা ললিত ওঁরাওয়ের আগমনে। যিনি আবার জেলা তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের একজন অস্থায়ী কর্মী।
ললিত দাবি করেন যে, তিনিই ওই এক কোটি টাকার দাবিদার। চরম বিড়ম্বনায় পড়ে পুলিশ। যে লটারির দোকান থেকে ওই পুরস্কারের টিকিট বিক্রি হয়েছিল, সেখানকার সিসি টিভির ফুটেজ যাচাই করে পুলিশ। তাতেই যবনিকা পড়ে দিনভর ওই টানাপড়েনের। দেখা যায়, আদতে ললিত ওঁরাও–ই কোটি টাকার লটারির টিকিট কিনেছিলেন। সমস্যার সমাধান হতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন পুলিশ কর্তারা।
শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিতে বাধ্য হন কোটি টাকার প্রথম দাবিদার সঞ্জীব ভগত। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা ভুল বোঝানোয় আমি ভড়কে গিয়েছিলাম। ভুল আমারই।’
অন্যদিকে, ললিত বলেন, ‘এত আনন্দের মধ্যেও আমার একটাই দুঃখ যে, আমার প্রাপ্য টাকাটা কেউ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ধন্যবাদ পুলিশ প্রশাসনকে।’ যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা।