• ‘বাচ্চাগুলোকে বার করার অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু...’, আক্ষেপ যাচ্ছে না প্রতিবেশী প্রমীলার
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৫
  • ‘ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ন’টা। ভাতের থালা নিয়ে সবে খেতে বসেছি। আচমকা বীভৎস একটা শব্দ শুনলাম। দৌড়ে বাইরে এসে দেখি পাশের বাড়িটা পুরো দাউ দাউ করে জ্বলছে। ভিতর থেকে ভেসে আসছে প্রচণ্ড চিৎকার। দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে বের করার অনেক চেষ্টা করলাম। পারলাম না। ওখানেই সব শেষ...।’ সোমবার রাতের বিস্ফোরণের বীভৎস দৃশ্য, চিৎকার এখনও কানে ভাসছে প্রতিবেশী প্রমীলা বণিকের। ‘জানেন,অনেক কষ্ট করে ওদের বাড়ির এক মহিলাকে বাইরে বার করেছিলাম। পুরো শরীরটা জ্বলে গিয়েছিল। আমরা ক’জন কাপড়, চাদর চাপা দিয়ে হাসপাতালে পাঠাই ওঁকে। কিন্তু তাও কিছু করা গেল না।’ কথাগুলি এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন প্রতিবেশী গৃহবধূ। তার পর আবার কালকের বীভৎস স্মৃতি মনে পড়তেই বুজে এল গলা। প্রমীলার মতো অবস্থা আর অনেকের।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট থানার অন্তর্গত দক্ষিণ রায়পুরের ৩ নম্বর ঘেরিতে সোমবার রাতে বিস্ফোরণ হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বাড়িতে মজুত রাখা বাজিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় বণিক পরিবারের ১১ জনের মধ্যে আট জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। দীর্ঘদিনের বাজির ব্যবসা বণিক পরিবারের। পেটের ভাত জোগায় যে বাজি, সেই বাজিই লিখল মৃত্যু পরোয়ানা।

    নিজেদের কারখানায় তৈরি বাজি বিস্ফোরণেই এক ঝটকায় শেষ প্রায় গোটা পরিবার। যদিও সুবজ বাজির আড়ালে অন্য কিছু তৈরি হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছেন বাজি কারখানার মালিক তুষার বণিক, চন্দ্রকান্ত বণিক ও তাঁদের মা। এই ঘটনায় জামিন অযোগ্য ধারায় পুলিশ মামলা দায়ের করেছে দুই বণিক ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে আটক বাজি কারখানার অন্যতম মালিক চন্দ্রকান্ত বণিক।

    দত্তপুকুর, চম্পাহাটি, কল্যাণীর পরও যে সচেতন নয় মানুষ তা আরও একবার প্রমাণিত। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, বাড়িতে বিপুল পরিমাণ বাজি রাখা ছিল। যে কারণে তাতে আগুন লাগায় তীব্র বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বাড়ির চিলেকোঠার ছাদ। ফাটল ধরেছে দেওয়ালে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় জানলা দিয়ে বাড়ির বাইরে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে ভিতরের ভারী ভারী সব আসবাব।

    প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, এ ভাবে গেরস্থ বাড়ির নাকের ডগায় বাজি ও বাজির মশলা রাখা নিয়ে বণিক পরিবারের সঙ্গে বহুবার মন কষাকষি হয়েছে প্রতিবেশীদের। কিন্তু কোনও কথাই কানে তোলেননি তাঁরা। সোমবার রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনায় যে ভাবে গোটা বণিক পরিবার মাসুল চোকাল তার পর কোনও ভাবেই এলাকায় বাজি কারখানা চলতে দেবেন না বলে, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এলাকাবাসী।

    চার শিশু-সহ গোটা পরিবারকে হারিয়ে হাহাকার থামছে না বণিক পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও কাছে। গত রাতের দৃশ্য দেখার পর আর খেতে পারেননি প্রতিবেশী প্রমীলা বণিক। কাউকে বাঁচাতে না পারার আফসোস ঝরে পড়ে তাঁর গলাতেও।

  • Link to this news (এই সময়)