এই সময়, শিলিগুড়ি: ভেঙে পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামকে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের আগ্রহে ফের নতুন করে সাজিয়ে তুলছে পূর্ত দপ্তর। ফাটল ধরা কংক্রিটের বিম লোহার তারজালি দিয়ে নতুন ঢালাই করে শক্তপোক্ত করা হচ্ছে। চওড়া বিম দিয়ে সেগুলিকে আরও পোক্ত করা হচ্ছে। দেখলে মনেই হবে না যে, ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় গত কয়েক বছর ধরে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকদের ঢুকতে দেওয়া হতো না। কার্যত দর্শকহীন মাঠে খেলাধুলা চলত।
গত কয়েক মাস ধরে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামের পূর্ব এবং উত্তর দিকে সংস্কার কাজ চলছে। এই অংশেই ছিল ক্রীড়া পরিষদের দপ্তর, কনফারেন্স রুম। কাজ প্রায় শেষের দিকে। পুরো নকশাই বদলে দেওয়া হয়েছে। নতুন নকশায় স্টেডিয়ামের এই অংশে দু’টি কনফারেন্স হল, একটি এসি ব্যাঙ্কোয়েট হল তৈরি করা হবে। থাকবে জিম, সমস্ত খেলাধুলা সম্পর্কিত সংগঠনের দপ্তর।
আগামী জুনেই এই অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই হাত পড়বে স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকে। সেখানেও নানা চমক থাকছে। এখন যেটা ফোসিন গেট সেখানে পাঁচতলা ভবন তৈরি হবে। থাকবে প্লেয়ার্স রুম, রেফারি’জ় কর্নার, প্রেস কর্নার, ভিআইপি রুম, ব্রডকাস্ট রুম, চেঞ্জিং রুম, কনফারেন্স হল, রেঁস্তোরা–সহ আরও নানা ব্যবস্থা।
নিচতলায় থাকবে অন্তত পক্ষে ১০০ গাড়ি রাখার মতো পার্কিং জোন। পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারি নতুন করে তৈরি করা হবে। সংস্কার করা হবে মাঠেরও। এ বিষয়ে গৌতম বলেন, ‘দীর্ঘদিন স্টেডিয়ামের সংস্কার হয়নি। নকশাতেও নানা গলদ ছিল। সবই শুধরে নেওয়া হবে। নতুন স্টেডিয়াম দর্শকেরাও পছন্দ করবেন।’
শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামকে নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের খেদ দীর্ঘদিনের। ১৯৮৩ সালে তিলক ময়দানে তৈরি করা হয় এই স্টেডিয়াম। তিন প্রান্তে তিনটি গ্যালারি ছিল। ১৯৮৮ সালে নেহরু কাপের আয়োজনের সুযোগ পেয়ে শহরের ব্যবসায়ী সমিতি ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়, নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)–এর সহযোগিতায় তড়িঘড়ি স্টেডিয়ামটির কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।
কিন্তু তার পরে আর সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ায় বেহাল হয়ে পড়ে স্টেডিয়ামটি। কখনও গ্যালারির চলার চাঙর খসে পড়ে। কখনও গ্যালারির রেলিং ভেঙে পড়ে। গ্যালারি লিক করে বৃষ্টির জল পড়ে যুব আবাসের ঘরে। স্টেডিয়ামের মালিক ক্রীড়া দপ্তর। দেখভাল করে মহকুমা প্রশাসন। কে স্টেডিয়ামের সংস্কার করবে, সেটাই যেন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল।
শেষ পর্যন্ত গৌতমের আগ্রহেই রাজ্য সরকার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম শিলিগুড়ি পুরসভার হাতে তুলে দেয়। তার পরেই শুরু হয় সংস্কারের পরিকল্পনা। প্রাথমিক ভাবে স্টেডিয়ামের পূর্ব ও উত্তর দিকের সংস্কার কাজ চলছে। এর পরে হাত পড়বে পশ্চিম দিকের ফোসিন গেট এলাকায়।
মেয়র বলেন, ‘দক্ষিণের কাঞ্চনজঙ্ঘা যুব আবাসটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পর্যটকেরা থাকতে পারবেন। এর বাইরে বাইরে থেকে নাট্যদলের কর্মীরা এলেও এখানে থাকতে পারবেন। নাট্যদলের কর্মীদের এখানে রাত কাটাতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।’
স্টেডিয়াম সংস্কারে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফোসিন। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘নেহরু কাপের সময়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় স্টেডিয়াম তৈরি হয়। স্টেডিয়াম নিয়ে শহরের মানুষের আবেগ রয়েছে। পুরসভা সংস্কারে নেমেছে শুনেছি। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’