কোথা থেকে আসত বাজি কারখানার কাঁচামাল, তৈরির পরে বিক্রিই বা হত কোথায়—পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাটে চন্দ্রকান্ত বণিকের বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণে পরিবারের আট জনের প্রাণহানির পরে উঠছে সে প্রশ্ন। বাজি ব্যবসায় কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি শিবিরে যোগ দেন চন্দ্রকান্ত। তার পরেও কী ভাবে বিস্ফোরণ, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।
ঢোলাহাট থানার দক্ষিণ রায়পুর এলাকার তৃতীয় ঘেরির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বছর দশেক ধরে বাজির কারবার চালাচ্ছে বণিক পরিবার। এর আগে ব্যবসার সূত্রে পুলিশ চন্দ্রকান্তকে ধরেওছিল। কয়েক মাস বন্ধ রাখলেও, বাজির কারবার থেকে হাত গোটাননি তিনি। ২০২৩ সালে চন্দ্রকান্ত স্ত্রীর (সান্ত্বনা) নামে বাজি তৈরি ও বিক্রির জন্য ‘গ্রিন লাইসেন্স’-এর আবেদন করেন। তদন্ত করে সে আবেদন খারিজ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। তার পরেও কারবার থামেনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৪ মার্চ বাটানগরে বাজি নির্মাতা-বিক্রেতাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। উদ্যোক্তা ‘অল বেঙ্গল তৃণমূল গ্রিন ফায়ার ক্র্যাকার্স ম্যানুফ্যাকচারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অফ ফ্যাক্টরিজ়’। বাজি নিয়ে সাবধানতা সংক্রান্ত সে শিবিরে যোগ দেন চন্দ্রকান্ত। সোমবার রাতে তাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে পরিবারেরই আট জনের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চন্দ্রকান্ত গোড়ায় মথুরাপুর থেকে বাজি তৈরির মালপত্র আনতেন। পরে ব্যবসা বাড়লে, দক্ষিণ ২৪ পরগনারই নুঙ্গি, মহেশতলা ও হাড়াল থেকে মালপত্র আসত। নুঙ্গি-মহেশতলা থেকে সড়কপথে বিষ্ণুপুর, ডায়মন্ড হারবার, উস্তি, কুলপি, মন্দিরবাজার হয়ে রাতে তাঁর বাড়িতে পৌঁছত মালপত্র। হাড়ালের ক্ষেত্রে চম্পাহাটি, সোনারপুর, বারুইপুর, জয়নগর, মথুরাপুর, মন্দিরবাজার, ঢোলাহাট, রায়দিঘি হয়ে আসত বাজির মশলা। তৈরি হওয়া বাজি কিছু এলাকা থেকেই বিক্রি হত। বাকি বাজি নানা পথে পৌঁছত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
চন্দ্রকান্তের বাজির কারখানায় কাজ করতেন স্থানীয় এক যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন ধরনের বাজি তৈরি হত এখানে। নিষিদ্ধ শব্দবাজিও ছিল। আমরা এ কাজের জন্য দিনে ৩০০-৩৫০ টাকা করে পেতাম।
বিভিন্ন পালা-পার্বণে বেশি বেশি বরাত আসত। বাসন্তী পুজো উপলক্ষে এখন তৈরি বাজি বেশি পরিমাণে বাড়িতে মজুত করেছিল চন্দ্রকান্তদা।’’
কী ভাবে সোমবার রাতে সে বাজিতে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানান দমকলের জয়নগরের স্টেশনের কর্তারাও।
পুরো রাস্তায় বাজি বা বাজির মশলা আটকানোর জন্য পুলিশের নজরদারি আদৌ ছিল কি না, পুলিশের সঙ্গে চন্দ্রকান্তদের ‘বোঝাপড়া’ ছিল কি না, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। চন্দ্রকান্তের শ্বশুর কুশময় ভাণ্ডারিও জানিয়েছিলেন, পুলিশের সঙ্গে ‘চুক্তি’ ছিল তাঁর জামাইয়ের। চন্দ্রকান্তের বাড়িতে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সমীরকুমার জানা ও পুলিশ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে খাওদাওয়াও হয়েছিল বলেও দাবি তাঁর।
জেলা পুলিশের কর্তারা অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। বিধায়ক অবশ্য বলেন, ‘‘আমার সম্পর্কে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। অনৈতিক কাজকে সমর্থন করি না। মিথ্যে রটানো হচ্ছে।’’