সুপ্রিম নির্দেশে চাকরি হারানোর পর আইনি পথ আছে একটাই! কী বলছেন আইনজীবীরা?
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৪ এপ্রিল ২০২৫
এবার কী হবে? তাহলে কি হকের চাকরি ফেরত পেতে হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক আবারও একবার পরীক্ষায় বসা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই এসএসসি-র ২০১৬ সালের প্যানেলভুক্ত যোগ্য প্রার্থীদের? আইনি পথে কি আর কোনও রাস্তাই খোলা নেই, যার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীরা অন্তত তাঁদের হারানো চাকরি ফেরত পেতে পারেন?
এই প্রশ্ন গতকাল থেকেই উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিশিষ্ট আইনজীবীরা নানা প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছেন। যার মোদ্দা কথা হল - একটা উপায় আছে। কিন্তু, সেই পথেও শেষমেশ খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনাই প্রবল।
উল্লেখ্য, ব্যাপক দুর্নীতি এবং সেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার কারণে এসএসসি বা রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের প্রায় সম্পূর্ণ প্যানেলই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে একই রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলা রুজু করা হয় শীর্ষ আদালতে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টও কলকাতা হাইকোর্টে রায় বহাল রাখে।
এর ফলে চাকরি হারাতে হয় প্রায় ২৬ হাজার কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও অশিক্ষক কর্মচারীকে। যাঁদের অধিকাংশই ন্যায্যভাবে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু, আদালতের পর্যবেক্ষণ হল - দুর্নীতির শিকড় এতটাই গভীরে চলে গিয়েছে যে যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব নয়, তাই সকলেরই চাকরি বাতিল করা হল!
এই ইস্যুতে 'সংবাদ প্রতিদিন'-এ নিজেদের আইনি মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য হল, যেহেতু এই রায় সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, তাই এই রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য রিভিউ পিটিশন রুজু করা যেতে পারে। কিন্তু, তাতে রায় বদলে যাবে - এমন সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
আইনজীবী অরুণাভ সেন জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে একমাত্র রিভিউ পিটিশন করা যেতে পারে। সেই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, কেবলমাত্র টেকনিক্যালি ভুলেরই রিভিউ হয়। আর, সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করে বিশেষ কোনও লাভ হয় না। কারণ, শীর্ষ আদালত নিজের ঘোষিত রায় বড় একটা পরিবর্তন করে না।
এর পাশাপাশি, গোটা ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অরুণাভ। একসঙ্গে এত মানুষের চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা সৎভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এবার সেই যোগ্য মানুষগুলোর সংসার কীভাবে চলবে? এটা সুপ্রিম কোর্টের ভাবা উচিত ছিল। আরও একটু সময় দেওয়া উচিত ছিল।
রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রও আইনি পদক্ষেপের প্রশ্নে একই কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, এই রায়ের প্রেক্ষিতে একমাত্র রিভিউ পিটিশনই করা যায়। কিন্তু, তাতে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, অতীতেও একাধিকবার এমনটা করা হয়েছে। কিন্তু, 'সাকসেস' খুবই কম এসেছে।
আইনজীবী মিত্র আরও জানান, রিভিউ পিটিশন করা হলে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশ্য এজলাসে বসে কোনও রায় লিখে শোনায় না। যে বেঞ্চ রায় দেয়, তার সদস্যরা প্রাইভেট চেম্বারে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
চাকরি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই গোটা ঘটনার জন্য একইসঙ্গে রাজ্য সরকার ও এসএসসি কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রাক্তন অ্য়াডভোকেট জেনারেল। তাঁর মতে, এই দুই পক্ষের ভুলের জন্য আজ এত মানুষকে তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
আরও এক প্রবীণ আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জানান, ভারতীয় সংবিধানের ১৩৭ নম্বর ধারা অনুসারে - সুপ্রিম কোর্ট তার নিজের রায়ও পর্যালোচনা করে দেখতে পারে।
কিন্তু, আইনজীবী মহল অন্য একটি বিষয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। যেহেতু এই রায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ দিয়েছে, তাই রিভিউ পিটিশন আদৌ করা যাবে কিনা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়।
যদিও আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলছেন, এক্ষেত্রেও রিভিউ পিটিশন করতে কোনও বাধা নেই। কারণ, সেটা সংবিধান স্বীকৃত।
এই বিষয়ে সহমত সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়। কিন্তু, বাস্তব প্রেক্ষাপটে খুব বেশি আশার আলো তিনিও দেখাতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, রিভিউ করার সুযোগ নিশ্চয় থাকছে। কিন্তু, তা খারিজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ৯৯.৯৯ শতাংশ। ফলে রিভিউ পিটিশন রুজু করেও কোনও লাভ হবে না।