রাসমণি পাত্র
আমার বিষয় এডুকেশন। ২০১৬ সালের এসএসসি’র একাদশ-দ্বাদশ বিভাগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। ইন্টারভিউয়ে ডাকও পাই। কিন্তু চূড়ান্ত মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়নি। নাম বের হয় অপেক্ষমানদের তালিকায়। নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে নিশ্চিত হয়ে বাকি আন্দোলনকারী সঙ্গে ২০২০ সালে ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে আন্দোলনে যোগ দিই। আমার ছেলের বয়স তখন মাত্র তিন বছর।
কোলাঘাটের ভোগপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কোদালিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে টানা পাঁচ বছর আন্দোলন মঞ্চে গিয়েছি। আজও সকাল থেকে আন্দোলন মঞ্চে ছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর বাড়ি ফিরে আসি।
রাজ্য সরকার প্রথম থেকে মনেপ্রাণে চেয়েছিল আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারের সেই ইচ্ছেটা পূরণ হল। আর যা হল তার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার ও এসএসসি’র যৌথ ‘প্রচেষ্টা’য় পুরো প্যানেল বাতিল হলো। তবে বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের আস্থা ছিল। ভেবেছিলাম আদালত সিবিআইকে দিয়ে যোগ্য–অযোগ্য বাছার কাজ করিয়ে নিতে পারবে। শেষ পর্যন্ত তা হলো না। আমার তো মনে হয় রাজ্য সরকার, এসএসসি, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যে একটা ‘সেটিং’ ছিল।
কারণ, কেউই তো যোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে পদক্ষেপ করল না। অযোগ্যদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমান তালিকা থেকে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়াই যেত। কেউ আমাদের কথা ভাবল না। দু’বছর আগে আমি মাথা কামিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তারপরেও কোনও বিচার পাইনি। এখন তো সব আশাই শেষ। যোগ্য যাঁরা চাকরি হারালেন তাঁদের কথা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।
আন্দোলন আপাতত থমকে গেল। খুব মনে পড়ছে যখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম তখন আমি ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ডেলিভারির তারিখ পেরিয়ে গিয়েছিল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কারণে। আমার ছেলের বয়স এখন ন’বছর। আর কিছু বলতে পারব না......