এই সময়: সুপ্রিম–নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হওয়ায় অথৈ জলে পড়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। তবে এর মধ্যেও সামান্য স্বস্তির খবর ৪২৩ জনের। কারণ, তাঁরা রাজ্য সরকারের অন্য কোনও বিভাগ অথবা কোনও স্বশাসিত সংস্থার চাকরি ছেড়ে ২০১৬–এর এসএসসি–র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে এসেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দিয়েছে— এই ৪২৩ জন তাঁদের পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তিন মাসের মধ্যে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবং তাঁদের আগের পোস্টে কাজ শুরু করার অনুমতিও দিতে হবে। পুরোনো কর্মস্থল ছেড়ে আসা থেকে শুরু করে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির মধ্যবর্তী সময়কে সরকারি নিয়মে ‘সার্ভিস ব্রেক’ বলে ধরা যাবে না। এমনকী সিনিয়রিটি ও ইনক্রিমেন্টের সুযোগও থাকবে তাঁদের।
এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থাকছিল— ওই ৪২৩ জন তাঁদের পুরোনো কর্মস্থল ছেড়ে আসার পরে নিশ্চিত ভাবে সেখানে অন্য কর্মী নিয়োগ হয়েছে। তা হলে তাঁরা পুরোনো জায়গায় ফিরে গেলে কী ভাবে কাজে যোগ দেবেন তাঁরা? শীর্ষ কোর্টের নির্দেশ, এই রকম প্রার্থীদের আগের কর্মস্থলে ফেরাতে প্রয়োজনে সুপার নিউমেরারি পদও তৈরি করতে হবে। এসএসসি–র মাধ্যমে এই ৪২৩ জন প্রার্থী শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
যদিও এই সামান্য স্বস্তি মিললেও সমস্যার জায়গাও আছে এই ৪২৩ জনের ক্ষেত্রে। তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাঁদের আবার বাড়ি থেকে বহু দূরের চাকরিতে ফিরে যেতে হবে। এঁদের কেউ কেউ স্কুলেই তুলনায় নিচু স্তরে (গ্র্যাজুয়েট) শিক্ষকের চাকরি করতেন। এখন তুলনায় উচ্চ স্তরের (মাস্টার্স স্কেলে) শিক্ষক পদে নিয়োগ হলেও তাঁদের আবার গ্র্যাজুয়েট স্কেলের চাকরিতেই জয়েন করতে হবে।
এমনই এক শিক্ষিকা সুনেত্রা সেনগুপ্ত। উত্তর শহরতলির কেষ্টপুরের বাসিন্দা সুনেত্রা ২০১০ সালে এসএসসি দিয়ে ঝাড়খণ্ড সীমান্তে পুরুলিয়ার মানবাজারের ২ নং ব্লকের জামতোড়িয়া হাইস্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকার নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। সেখানে তিনিই একমাত্র শিক্ষিকা ছিলেন। বাম আমলে রাজ্যে এসএসসি–র মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক–শিক্ষিকাদের বদলি প্রক্রিয়া ছিল না। তাই ২০১৬ সালের এসএসসি দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়–২ নম্বর ব্লকের ভোজেরহাটে সারদা দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি পান। এ দিনের রায়ের পরে সুনেত্রার আক্ষেপ, ‘আবার ঘর–সংসার ছেড়ে বাড়ি থেকে ৪২০ কিলোমিটারের বেশি দূরে স্কুলে যোগ দিতে যেতে না হয়!’ এমনই আশঙ্কা হুগলির পাণ্ডুয়ার রূপ ভট্টাচার্যের।
তিনি বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের পাটুলি হাইস্কুলে বায়োলজির উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক। এ দিন তিনি বলেন, ‘আমি ২০১০ সালে এসএসসি দিয়ে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটির ডুমুরিয়া জুনিয়র স্কুলের শিক্ষক পদে যোগদান করেছিলাম। বাড়ির কাছাকাছির পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করব বলে ২০১৬ সালের পরীক্ষায় বসেছিলাম। স্বচ্ছ ভাবে সফল হয়ে স্কুলে যোগও দিয়েছিলাম। এখন তো আমাকে আবার পুরানো স্কুলে নিম্ন স্তরেই ফিরে যেতে হবে!’ দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুনীলকুমার ঘোষ বলেন, ‘আমি ১৯৯৯ সালে এসএসসি–র মাধ্যমে অন্ডাল হাইস্কুলে বাংলার পাশের শিক্ষক হয়েছিলাম। ২০০৮, ২০১১ এবং ২০১৩ সালেও এডুকেশনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায়, চাকরিতে যোগ দিইনি। ২০১৬ সালের পরীক্ষা দিয়ে জামুরিয়ার স্কুলে যোগ দিই। এখন তো আমাকেও অনেক দূরে যেতে হবে।’