• কাজই গেল, কাল কী হবে! দিশাহারা কর্মহারা দম্পতিরা
    এই সময় | ০৪ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: এ বার! সংসার চলবে কী করে? ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা? মা–বাবার ওষুধ? বাড়ি–গাড়ির ইএমআই? কোয়েশ্চেন পেপারটা খুব কঠিন।

    সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বৃহস্পতিবারের হাজার ছাব্বিশ কর্মহীনের মধ্যে আছেন বহু দম্পতি। স্বামী–স্ত্রী দু’জনেই ২০১৬ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন। হঠাৎই দু’জনে ‘বেকার’। এখন দিন চলবে কী করে, জানেন না।

    এঁদের অনেকের বিপর্যয়ে কাঁদছেন স্কুলের সহকর্মী থেকে ছাত্রছাত্রীরাও। যেমন সিউড়ি যদুরায় হাইস্কুলের অঙ্কের টিচার মহেন্দ্র পাল ও শিক্ষাকর্মী অর্পিতা রায়। দু’জনেই ২০১৮–য় ওই স্কুলে যোগ দেন। ২০২২–এ বিয়ে। অল্প দিনেই স্কুলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মহেন্দ্র ও অর্পিতা। সহকর্মীদের পাশে সব সময়েই দাঁড়াতেন তাঁরা। দু’জনে যে হঠাৎ স্কুল থেকে বাদ পড়েছেন, সেটা যেন কারও বিশ্বাসই হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক যামিনীকান্ত সাহা বলেন, ‘মহেন্দ্র মাল্টি ট্যালেন্টেড। ক্লাসের পাশাপাশি অনেক কাজই সামলাতেন। ব্যক্তিগত বিষয়েও সব সময়ে ওঁর কাছে মিলত সাহায্য। তা ছাড়া উনি নেট কোয়ালিফায়েড এবং অঙ্কে পিএইচ ডি। যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে না।’

    অনেকের প্রশ্ন ‘সামাজিক সম্মান’ ক্ষুণ্ণ হওয়া নিয়েও। যেমন মুর্শিদাবাদের শিক্ষক পিঙ্কি বিশ্বাস ও হিমাদ্রি ঘোষ। ছ’বছরের সন্তান আছে তাঁদের। সংসার চালানো নিয়ে তো বটেই, পাশাপাশি পিঙ্কি–হিমাদ্রির প্রশ্ন, ‘কাল যখন আমাদের মেয়েকে কেউ জিজ্ঞাসা করবে যে তোর মা–বাবার চাকরি গিয়েছিল কেন? ও কী উত্তর দেবে বলতে পারেন!’ মুর্শিদাবাদেরই আর এক দম্পতি চাকরির সূত্রে বহরমপুরে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন লোন নিয়ে। বছর চারেকের সন্তানকে নিয়ে ছোট্ট নিটোল সংসার। এখন ফ্ল্যাটের ইএমআই থেকে সংসার খরচের টাকা আসবে কোথা থেকে, জানেন না তাঁরা।

    বারাসতের অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী সায়নী মজুমদারও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। অর্ঘ্য বনগাঁর একটি স্কুলে কেমিস্ট্রি পড়াতেন। আর সায়নী ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একটি স্কুলের ফিজ়িক্সের টিচার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করে ‘গেট’ কোয়ালিফাই করেন অর্ঘ্য। কিন্তু আর্থিক প্রয়োজনেই এসএসসি পরীক্ষা দেন ও শিক্ষকতার চাকরি পান। নিশ্চিন্ত আয়ে নিশ্চিন্ত জীবন কাটত তাঁদের। এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

    তালিকায় রয়েছেন বালুরঘাট হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক অর্ণব অধিকারী ও অযোধ্যা কেডি স্কুলের শিক্ষক সুলগ্না অধিকারী। তাঁরা স্বামী–স্ত্রী। বাড়ি তিওড়ে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা–মা ও ছোট্ট ছেলে রয়েছে। এই দু’জনের আয়ের উপরই সংসার চলত। এক ধাক্কায় দু’জনের চাকরি যাওয়ায় অথৈ জলে পড়েছেন অধিকারী দম্পতি। যদিও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের কলাইকুন্ডার সৌমেন জানা ও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির বাসিন্দা মৌমিতা মণ্ডলও হঠাৎ ‘কর্মহারা’। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানার একটি স্কুলে ২০১৯–এ যোগ দেন ইতিহাসের শিক্ষক সৌমেন। সে বছরই পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন মৌমিতা। ২০২২–এ বিয়ে হয় তাঁদের। স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার্থে দু’জনেই মেদিনীপুরে থাকতেন। আচমকা চাকরি হারিয়ে দিশাহারা তাঁরাও।

  • Link to this news (এই সময়)