এই সময়: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে ২০১৬ সালের চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। অর্থাৎ, প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হলো। তবে তাঁদের মধ্যে ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত’দের বেতনও ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কারা এই টেন্টেড’ প্রার্থী? সেই সংখ্যাটাই বা কত?
সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্ট, এসএসসি ও রাজ্য সরকারের পেশ করা তথ্য–পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এই সংখ্যাটা ৬,২৭৬। কারণ, এসএসসি নিজেই জানিয়েছে, প্যানেল বহির্ভূত ভাবে ১৪৯৮ জন নিয়োগ পয়েছিলেন। ৯২৬ জন চাকরিপ্রাপকের ক্ষেত্রে র্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে এবং ৪,০৯১ জনের ক্ষেত্রে ওএমআর–এ কারচুপির পরেও তাঁদের নাম নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে।
এই পুরো তালিকার মধ্যে আবার ২৩৯ জনের নাম ওএমআর কারচুপি ও অন্যান্য জালিয়াতি— দু’টোর ক্ষেত্রেই রয়েছে। সব মিলিয়ে ৬,২৭৬ জন যে ‘যোগ্যতা’ না–থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতি করে নিযুক্ত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে শীর্ষ কোর্ট। এঁদেরই নিয়োগের পর থেকে পাওয়া বেতনের টাকা ফেরাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও তাঁরা বেতন কী ভাবে ফেরাবেন, সেটা সরকারের কাছে কী ভাবে জমা পড়বে— তার ব্যাখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, নবম–দশমে শিক্ষকের চাকরির ক্ষেত্রে একজন মাসে ৪০ হাজারের আশপাশে মাইনে পান। এটা তাঁর চাকরি শুরুর বেতন। সেই হিসেব ধরলে ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মার্চ অবধি সেটা প্রায় ২৪ লক্ষের কাছাকাছি দাঁড়ায়। এর মধ্যেও ধাপে ধাপে বেতন বেডে় ৫৪ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। ফলে যে টাকা তাঁদের ফেরাতে হবে, সেটা আরও অনেকটা বেশিই হবে।
একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষকের ক্ষেত্রে স্টার্টিং স্যালারি মোটামুটি মাসিক ৪৮ হাজারের আশপাশে। এই হিসেবে এগোলে ২০২৪ অবধি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বেতন হবে ওই শিক্ষকের। এরপরে ধাপে ধাপে বেতন বেড়ে থাকলে বাড়বে মোট টাকার পরিমাণও। টাকা ফেরানোর ক্ষেত্রে সময়সীমা ২০২৪ সাল পর্যন্তই ধরা হচ্ছে। কারণ, কলকাতা হাইকোর্ট গত বছরেই চাকরি খারিজ করে এই মামলায় বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিল। এসএসসি–র গ্রুপ–সির ক্ষেত্রে চাকরির একেবারে শুরুতে একজন মাসে ২৬ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন। তাঁদেরও বেতন বাড়ে।
স্টার্টিং স্যালারি ধরে এগোলে মোটামুটি ২০২৪ অবধি ১৬ লক্ষের টাকার বেশি ফেরাতে হবে তাঁদের। গ্রুপ–ডির ক্ষেত্রে শুরুতে বেতন ১৯ হাজার টাকা ধরলে, ২০২৪ অবধি তা ১১ লক্ষের মতো হয়। প্রতি ক্ষেত্রেই বেতনের অঙ্ক বেড়েছে। অর্থাৎ, মোটা অঙ্কের টাকা ফেরাতে হবে এই চাকরিহারাদের। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, বেআইনি ভাবে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, ১২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দেবেন তাঁরা। যদিও শীর্ষ কোর্টের নির্দেশে সুদ সমেত টাকা ফেরানোর কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও অবশ্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রায়ের কপি তুলে ধরে দাবি করেন, চাকরি যাওয়া একজন প্রার্থীকেও বেতন ফেরতের নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। যদিও আদালতের রায় আপলোড হতে দেখা যায়, কেলেঙ্কারির জন্য যে সব প্রার্থীর শুধু চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁদের নিয়োগই যে হেতু প্রতারণার পথে, তাই এতদিন পাওয়া বেতন তাঁদের ফেরত দিতে হবে। বাকিদের চাকরি গেলেও মাইনে ফেরতের কথা বলা হয়নি। বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রেও মানবিক কারণে কিছু ‘ছাড়’ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ— নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্কুলে আপাতত চাকরি করতে পারবেন এবং বেতনও পাবেন।