• একই প্যানেল, একসঙ্গে পথচলা শুরু, স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হবে ছাত্রদের জনপ্রিয় দম্পতিকে
    প্রতিদিন | ০৪ এপ্রিল ২০২৫
  • নন্দন দত্ত, সিউড়ি: একই প্যানেল, একসঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন এক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী দম্পতি। চাকরি বাতিলের কোপে পড়লেন দু’জনেই। বৃহস্পতিবারের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্কুল থেকে চলে যেতে হবে ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় এই দম্পতিকে। কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল এন্ড পাবলিক স্কুলের গণিতের শিক্ষক মহেন্দ্র পাল আর শিক্ষাকর্মী অর্পিতা রায়কে স্কুল ছাড়তে হবে। যদিও তাঁদের ছাড়তে রাজি নয় বিদ্যালয়। প্রথমত, এমন স্কুল ও ছাত্র দরদি দম্পতি আর স্কুলে নেই। দ্বিতীয়ত, ছাত্রছাত্রী, সহকর্মীদের দরদি শিক্ষাবন্ধু মেলা ভার। তাই প্রধান শিক্ষক যামিনী কান্ত সাহা জানালেন, ‘‘আমরা এখনও স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে কোনও নির্দেশ পায়নি। তাই যতদিন না পাচ্ছি, আমরা ওদের ছাড়ব না।’’

    ২০১৬ সালের প্যানেল হলেও ২০১৮ সালে তাঁরা স্কুলে যোগদান করেন। একসঙ্গে। ২০২২ সালে দু’জনে বিয়ে করেন। সহকর্মীরা জানান, ‘‘শুধু স্কুলের পাঠ বা ছাত্রছাত্রীদের নয়, সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোয় ওদের মতো জুড়ি ছিল না। স্কুলে শুধু এই দম্পতি নয়, আরও দু’জন আছেন। কিন্তু মহেন্দ্র স্যার চলে গেলে কে উচ্চশিক্ষার গণিত করাবেন সে নিয়ে চিন্তিত স্কুল। কারণ শুধু পাঠদান নয়, গণিতের মাস্টার্স, গবেষক ডক্টর মহেন্দ্র পাল নেট পাস করেছিলেন। শুধু স্কুলকে ভালোবেসে বাড়ির কাছে থাকতে চেয়ে যদুরায়ে আসেন। স্কুলের যাবতীয় ইন্টারনেটের কাজ তিনি করে দিতেন। শুধু স্কুলের নয়, ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত কাজও ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুশি মনে করে দিতেন।’’

    শুধু প্রধান শিক্ষক নন। সহকর্মী শিক্ষক পার্থসারথি ঘোষ জানান, ‘‘বড় মানবিক শিক্ষক দম্পতি। দু’দিন আগেই শিক্ষাকর্মী শেখ বাসের আলির বোনাসের টাকা আসেনি। কারণ অনলাইনের কিছু সমস্যা। সে কথা জেনে নিজেরা বোনাসের টাকা বাসেরের হাতে তুলে দিলেন দম্পতি। স্কুলের উদ্যোগ সবেতেই এগিয়ে মহেন্দ্র-অর্পিতা। এই অসহায় পরিস্থিতিতে কিভাবে ওদের পাশে দাঁড়াব সেটা ভেবেই আমরা আকুল।’’ আরেক সহকর্মী জানান, গভীর রাতে পরের দিনের বিমানের টিকিটের জন্য কি করা যায় জানতে চাইলে তক্ষুনি টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে অপারেশনের জন্য বেঙ্গালুরু পাঠিয়েছিলেন মহেন্দ্র।

    সিউড়ির সমন্বয় পল্লির বাসিন্দা মহেন্দ্র। অর্পিতা পাশের পাড়া সাজানো পল্লির। দু’জনে যদুরায় স্কুলে আসার পরে পরিচয়। তারপরে দাম্পত্য জীবন শুরু। অর্পিতা শিশুপুত্রর মা হয়েছেন সবে। সেই সুবাদে গত ডিসেম্বর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। ছাত্রছাত্রী সহকর্মীরা চায় এই দম্পতিকে। সঙ্গে আরও দুই শিক্ষককে। কিন্তু এখন কী উপায়? তার পথ খুঁজছে সকলে। জানা গিয়েছে, আজ স্কুলে আসেননি মহেন্দ্র ও চাকরি হারানো আরও দু’জন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)