এই সময়, জলপাইগুড়ি: মাথায় বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে পরিবার চালাতে বেতনের একটা বড় অংশ তাঁকেই টানতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম নির্দেশে এক ঝটকায় চাকরি হারিয়ে মাথায় হাত জলপাইগুড়ির ফনীন্দ্রদেব বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষিকা তনুশ্রী সুত্রধরের। ২০১৬ সালের এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে ফনীন্দ্রদেব উচ্চ বিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা তনুশ্রী।
তার পর দীর্ঘদিন যোগ্যতার সঙ্গেই কাজ করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করে এন্ট্রান্স দিয়ে বিশ্বভারতীতে মাস্টার ডিগ্রিতে চান্স পাই। পরে সেখান থেকেই পিএইচডি করি।’ জলপাইগুড়িতে বিয়ে করে এখানেই আছেন। ফনীন্দ্রদেব উচ্চ বিদ্যালয়ে আসার আগে আপার প্রাইমারি এবং বেলাকোবা গালর্স স্কুলে নবম এবং দশম শ্রেণিতে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একদম ভেঙে পড়েছেন এই কৃতী। চাকরি হারিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণ মেটানো নিয়েই সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
তনুশ্রী বলেন, ‘বাড়ি তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা ঋণ নিয়েছি। মাসে বেতনের ৩৪ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। বৃদ্ধ বাবা–মা এবং শাশুড়ি রয়েছেন। তাঁদের ওষুধ এবং সংসারের খরচ রয়েছে। স্বামী বেসরকারি সংস্থার সামান্য বেতনের কর্মী।’ এই অবস্থায় এখন কী করবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না সদ্য চাকরি হারানো এই মহিলা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারালেন ধূপগুড়ি মহকুমার ৪২ জন শিক্ষক। শুক্রবার থেকে ধুপগুড়ি হাইস্কুলে শুরু হবে বার্ষিক পরীক্ষা। আদালতের নির্দেশে এই স্কুলের ছ’জনের চাকরি গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গুণময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কাল থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তার আগে এইভাবে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি খোয়ানোয় আমরা দারুণ সমস্যা পড়লাম। যিনি কম্পিউটারের কাজ করতেন তাঁরও চাকরি গিয়েছে। কী ভাবে স্কুল পরিচালনা করব বুঝতে পারছি না।’
একই ভাবে চাকরি বাতিলের তালিকায় রয়েছে দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলের আটজনের নাম। কালিরহাট দেওয়ান চন্দ্র হাইস্কুলের চারজন, ধূপগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের তিনজন, আংরাভাসা বংশীবদন হাইস্কুলের তিনজন, গয়েরকাটা হাইস্কুলের ছ’জন, গয়েরকাটা গার্লস হাইস্কুলের দু’জন চাকরি খুইয়েছেন। এ ছাড়া শালবাড়ি হাইস্কুলের সাতজন শিক্ষক ও বিদ্যাশ্রম দিব্যজ্যোতি বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের ১১ জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মীর নাম চাকরি বাতিলের তালিকা রয়েছে।