এই সময়, মালদা: স্বামীর সঙ্গে মানসিক দূরত্ব হওয়ায় এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন মহিলা। স্বামী–সন্তান ছেড়ে থাকতে শুরু করেন মায়ের কাছে, মালদার হবিবপুরে। কলকাতায় চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার নাম করে মঙ্গলবার প্রেমিক ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যান দিঘায়। বুধবার রাতে সেখানকার একটি হোটেল থেকে ওই মহিলার দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আত্মহত্যা নয়, খুনের ঘটনা বলে দাবি করেছে মৃতার পরিবার। বৃহস্পতিবার মহিলার দেহ নিয়ে আসার জন্য দিঘার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চুমকি দাস (২৪)–এর বাড়ি হবিবপুর থানা এলাকায়। তাঁর বাবা পাপ্পু দাস কয়েক বছর আগে মারা যান। মা বন্দনা দাস পাঁচ বছর আগে নিজের উদ্যোগে বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেন পুরাতন মালদা পুরসভার বাসিন্দা, পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী এক যুবকের সঙ্গে। তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। বছর খানে আগে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় মেয়েকে স্বামীর কাছে রেখে মায়ের কাছে হবিবপুরে ফিরে আসেন চুমকি।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মহিলা তাঁর স্বামীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। এ নিয়েই তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হলে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে হবিবপুরে বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। সোমবার দুই পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে গাড়িতে চেপে দিঘায় ঘুরতে যান চুমকি। বুধবার রাতে হোটেলের ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার মা বন্দনা বলেন, 'জামাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক খারাপ হয়। অনেক চেষ্টা করে সেই সম্পর্ক নতুন ভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি। তিন মাস আগে মেয়ে, পুরাতন মালদায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করে।
কিন্তু ওর নতুন পুরুষ বন্ধু বিপত্তি ঘটায়। ফের অশান্তি শুরু হয়। মেয়ে আবার আমার কাছে ফিরে আসে।' তিনি বলেন, 'ওরা যে দিঘায় ঘুরতে গিয়েছে সেটা জানতাম না। আমাকে বলেছিল, একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরির ইন্টারভিউ দিতে কলকাতায় যাচ্ছে। বুধবার রাতে দিঘা থানার পুলিশ আমাকে ফোন করে মেয়ের মৃত্যুর কথা জানায়।' তাঁর অভিযোগ, 'মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে ঘরের সিলিংয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পিছনে মেয়ের ওই পুরুষ বন্ধু জড়িত।'
হবিবপুর থানার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানতে পেরেছে, দিঘার হোটেলে চুমকি তাঁর প্রেমিককে স্বামী পরিচয় দিয়ে হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরও দু'জন ছিলেন। মৃতার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার সময়ে তিন জন সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। শরীর খারাপ থাকায় হোটেলে ছিলেন চুমকি। বন্ধুরা ঘণ্টা দু'য়েক পরে হোটেলে ফিরে ঘরের মধ্যে চুমকির ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, মৃতার পরিবার নির্দিষ্ট ভাবে লিখিত অভিযোগ জানালে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।