• ‘সৃজনী’র হাত ধরে ডানা মেলতে চান রিমি
    এই সময় | ০৪ এপ্রিল ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ ■ মালবাজার

    শুরুর দিনে তাঁর পথচলার সঙ্গী ছিলেন এক জন। আজ উনিশ বছর পরে তাঁর সংস্থায় কাজ করেন ২৫ জন মহিলা। শাড়ি, পাঞ্জাবি বা কুর্তিতে ফেব্রিক আর সুতো দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলেন জলপাইগুড়ির মালবাজারের রিমি পালচৌধুরী বসু। বিছানার চাদর, দরজা–জানলার পর্দা তাতেও ছড়িয়ে দেন নিজস্ব মুন্সিয়ানা। তাঁর ডিজ়াইন, নজরকাড়া ভাবনায় 'আমার প্রেরণা সৃজনী'র আজ বাড়বাড়ন্ত।

    দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মেলে ধরেছে মেয়েদের নিয়ে গড়া রিমির এই প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে অর্ডার আসছে নানা প্রান্ত থেকে। মালবাজার শহর ছাড়িয়ে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এমনকী বর্ধমানের মেয়েরাও তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কোনও কাজের বরাত এলে সবার মধ্যে ভাগ করে দেন তিনি। জিনিসপত্র মালবাজার থেকে কুরিয়ারে পৌঁছে যায় তাঁদের ঠিকানায়। এই যেমন বর্ধমানের মেয়ে পারমিতা বসাক। কী ডিজাইন করতে হবে, কী ভাবে করতে হবে, বুঝে নেন ভিডিয়ো কলে। কাজ শেষ করে তা ফের রিমিকে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন তিনি। রিমি বলেন, 'বাইরের মেয়েরা খুব সহজেই কাজে যুক্ত হয়েছেন। দূরত্ব কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ব্যবসা বাড়লেও আমি বা আমার মেয়েরা আজ পর্যন্ত কোনও ঋণ নিইনি।'

    লাটাগুড়ির মেয়ে রিমি। ২৪ বছর আগে স্বামীর হাত ধরে এসেছিলেন মালবাজার শহরের নেতাজি কলোনিতে। কন্যাসন্তান একটু বড় হতেই কিছু একটা করার তাগিদ চেপে বসে। পেশায় লাটাগুড়ি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা রিমি প্রথমে পাড়ার মেয়েদের কাজ শিখিয়ে নেন। তারপর শুরু হয় সংস্থা গড়া। প্রথম উপার্জন পেয়ে ওই মেয়েরা দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে হাত লাগান। কাজের মান ও শৈল্পিক মুন্সিয়ানার জন্য অর্ডার বাড়তে থাকে। দরকার হয় আরও অনেক মেয়েদের। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। সংসার সামলে বাড়তি উপার্জনের আশায় অনেকে আসতে থাকেন। এক, দুই করে সংখ্যাটা এখন ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

    কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় স্টল সাজানোর সুযোগ পেয়েছিলেন রিমি। এর মধ্যে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি চণ্ডীগড়ে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পমেলায় যোগ দেন। এর পরে নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন শহরে পসরা সাজিয়ে বসা শুরু করেন। গত বছর তিন দিনের প্রদর্শনী করেছিলেন কোচবিহারে। কলকাতাতেও রিমির কাজের সুনাম হয়েছে।

    তাঁর সঙ্গী ঝুমুর ঘোষ, মণিকা সাহা বলেন, ' প্রথম প্রথম সংসারের কাজ সামলে আসাটা একটু চাপ হলেও এখন সাফল্য আসায় স্বামীও সহযোগিতা করেন।' কত টাকার ব্যবসা হয় বছরে? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে রিমি শুধু বলেছেন, 'চলতি বছরের পুজোর অর্ডার মে মাসে বন্ধ করা হবে।' এটা কি ব্যবসা–বৃদ্ধির ইঙ্গিত! নিরুত্তর থেকেছেন সৃজনীর কর্ণধার।

  • Link to this news (এই সময়)