নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া জেলার স্কুলগুলিতে বর্তমানে চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রথম ইউনিট টেস্ট চলছে। স্কুলগুলির ‘সিঙ্গেল টিচার’ বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকদের চাকরি চলে যাওয়ায় ওই পরীক্ষা আয়োজন ও খাতা দেখা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। এদিকে, চাকরি হারানো শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের মধ্যে শুক্রবারও হতাশা লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেউ গৃহঋণের কিস্তি মেটানো নিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন, কাউকে আবার বাবা-মায়ের চিকিৎসা চালানোর চিন্তা গ্রাস করেছে।
বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পীযূষকান্তি বেরা বলেন, আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। ছাত্রছাত্রী বা স্কুলের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।
বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমনা ঘোষ বলেন, ১-১২ এপ্রিল জেলার সব বিদ্যালয়ে প্রথম ইউনিট টেস্ট নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্কুলে পরীক্ষা চালুর পর দিন আদালতের রায়ে চারজন শিক্ষিকার চাকরি চলে গেল। এর ফলে ‘সিঙ্গল টিচার’ ছিলেন, এমন বিষয়গুলির পরীক্ষা নেওয়া বা খাতা দেখা ও ফল প্রকাশ নিয়ে আমরা চরম সমস্যায় পড়েছি। একেই শিক্ষিকারা অবসর নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শূন্যপদে নিয়োগ হয়নি। তার উপর এভাবে পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষিকাদের চাকরি যাওয়ায় সুষ্ঠুভাবে স্কুল চালানো যাবে কি না, তা ভাবতে হচ্ছে।
সদ্য চাকরি হারানো বাঁকুড়া মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক শিশিরকুমার গড়াই বলেন, খাতড়ায় গরিব চাষি পরিবারে আমার জন্ম। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই আমি প্রাইভেট টিউশনি পড়াতাম। তা থেকেই নিজের পড়ার খরচ চলত। আমার বহু ছাত্র জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। ২০১৯ সালে আমি স্কুলে যোগ দিই। আমার যোগ্যতা নিয়ে কেউ কোনওদিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তারপরেও চাকরি হারাতে হল। বাঁকুড়া শহরের উদীয়মানপল্লিতে বাড়ি করার জন্য ৭০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে হয়। চাকরি চলে যাওয়ায় ব্যাঙ্কের গৃহ ঋণের টাকা শোধ করা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা চাকরি হারানো এক শিক্ষিকা বলেন, একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আমার বাবা-মা আমার উপর নির্ভরশীল। বাবা, মা দু’জনেই অসুস্থ। কিছুদিন আগে মায়ের অপারেশন হয়েছে। প্রতিমাসে দু’জনের কয়েক হাজার টাকার ওষুধ লাগে। চাকরি চলে যাওয়ায় আমরা খাব কী? কীভাবেই বা বাবা, মায়ের চিকিৎসা চলবে? তা নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছি।