• ২৬ হাজারের চাকরি ৩ মাসে হবে না, জানিয়ে দিল এসএসসি, হাহাকার বাড়ছে, চেষ্টা আত্মহত্যার
    বর্তমান | ০৫ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর ভবিষ্যৎ কী? শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়া স্কুলগুলিরই বা কী হবে? বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এই দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। একটা বিষয় অবশ্য স্পষ্ট। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলই বাতিল। ফলে ওই বিপুল সংখ্যক শূন্যপদে নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সেকথা সাফ জানিয়ে দিলেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তাঁর দাবি, পরীক্ষা নিয়ে ফলপ্রকাশ এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, হতাশ হবেন না। কমিশন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছে। রায় নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। তবে, শিক্ষাদপ্তরের কাছ থেকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর চিঠি ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে কমিশন। সেপ্রসঙ্গে বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আমরা মানবিকভাবে যোগ্য এবং বঞ্চিতদের পাশে থাকব।’

    সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও চাকরি বাতিলকে কেন্দ্র করে হাহাকার চরমে। দু’টি দুঃখজনক ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে। ক্যানিংয়ে পাওনাদারদের চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন রায়বাঘিনী হাইস্কুলের চাকরি হারানো এক শিক্ষিকা। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আবার পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার সোনাকুড় গ্রামে এক দম্পতির চাকরি বাতিল হয়েছে। পুত্র ও পুত্রবধূর চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন মা মঞ্জুলা যশ (৬৯)। রায়ের খবর পাওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

    সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থী নিয়েও বিতর্ক চরমে। তবে এসএসসি যে তাদের তালিকা পৃথকভাবে দিতে পেরেছে, সেই দাবি এদিনও করেছেন সিদ্ধার্থ মজুমদার এবং ব্রাত্য বসু। রায়ের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট কিছু প্রার্থীকে চাকরি ফেরাতে বলেছে। এতে স্পষ্ট যে, যোগ্য এবং অযোগ্যদের বিভাজন রয়েছেই। তবে, সুপ্রিম কোর্ট হয়তো কমিশনের তথ্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এব্যাপারে একমত সিদ্ধার্থবাবুও। তিনি বলেন, ‘তথ্য দিতে পারিনি, তা সঠিক নয়।’ রিভিউ পিটিশন করা হবে কি না, এ নিয়ে অবশ্য দু’জনেই কিছু বলতে চাননি। তবে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ কেন সম্ভব নয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিদ্ধার্থবাবু। তাঁর বক্তব্য, মোট ২৮ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল। পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ২২ লক্ষ। এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীকে ফের পরীক্ষার সুযোগ দিতে সময় প্রয়োজন।

    যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন চালানো নিয়ে সংশয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কারণ, একাদশ-দ্বাদশেই শিক্ষকের সংকট বেশি। সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে কলকাতা রিজিয়নে। এর আওতায় রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতা। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা সামাল দেওয়া সম্ভব বলেই দাবি সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, খুব বেশি হলে মোট ১৫ শতাংশ পরীক্ষকের খাতা ফেরত নিতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)