সরকারি হাসপাতালে জাল ওষুধ সাপ্লাই! লাইসেন্স বাতিল কাঁকুড়গাছির বিক্রেতার
বর্তমান | ০৫ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরকারি হাসপাতালে শিশুদের জাল ইঞ্জেকশন সরবরাহ করায় কাঁকুড়গাছির একটি ওষুধের দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হল। মেয়াদোত্তীর্ণ নিউমোনিয়ার টিকা দোকানে রাখা, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজে সদ্যোজাত শিশুদের বিভাগে নিম্নমানের জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন সরবরাহ সহ গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে ‘লোকনাথ মেডিক্যাল’ নামে ওই দোকানের বিরুদ্ধে।
কাঁকুড়গাছির এই ওষুধের দোকানের লাইসেন্স ২০২৯ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাতিল করে দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক তিনটি অভিযোগ। প্রথমত, দোকানের ফ্রিজে মেয়াদোত্তীর্ণ নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন রাখা। দ্বিতীয়ত, এন আর এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি সদ্যোজাতদের ফুসফুসের শিরা-ধমনীর সরু মুখ খোলার জন্য এক ধরনের ‘ভেসোডায়ালেটর’ (সিলডেনাফিল) সরবরাহ করা। ওই দোকান থেকে যাওয়া ভেসোডায়ালেটর ইঞ্জেকশনগুলিতে ভেজাল ধরা পড়ে। এমনকী, তাতে ছত্রাক পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছিল। ওই দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ ইন্দিরা দে স্বয়ং। তিন নম্বর অভিযোগটি হল নিম্নমানের মেরোপেনাম ইঞ্জেকশন সরবরাহ। রোগীর সংক্রমণ সংক্রান্ত জীবনমরণ সঙ্কট দেখা দিলে চতুর্থ প্রজন্মের এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, শোকজের উত্তর না দেওয়া, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানিতে অংশ না নেওয়া সহ অজস্র অভিযোগ রয়েছে ‘লোকনাথ মেডিক্যাল’-এর বিরুদ্ধে।
এদিকে, ভেজাল ওষুধের তদন্তে বৃহস্পতি ও শুক্রবার টানা অভিযান চালানো হয় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। বেহালা, মেহতা বিল্ডিং, গান্ধী মার্কেট, বাগড়ি মার্কেটে হানা দেন অফিসাররা। উত্তর কলকাতার একটি পরিচিত নার্সিংহোম থেকে সম্প্রতি জাল অ্যালবুমিন উদ্ধার হয়েছিল। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের যৌথ তদন্তে দেখা যায়, মুম্বই থেকে লখনউ হয়ে জাল ওষুধগুলি ঢুকেছিল ওই প্রাইভেট নার্সিংহোমে। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জাল অ্যালবুমিন আসার আরও একটি পথ জানতে পারেন অফিসাররা। হুগলি হয়ে বেহালার এক দোকানদারের হাত ঘুরে জাল ইঞ্জেকশনগুলি উত্তর কলকাতার ওই নার্সিংহোমে ঢুকেছিল বলে জানা যায়। সেই সূত্র ধরে ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা পৌঁছে গিয়েছিলেন হুগলিতেও। তারপর এদিন বেহালা এবং হুগলির দোকানের দুই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল। সোমবার তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও। সূত্রের খবর, ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় জাল ওষুধ আসা বন্ধ করতে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) প্রকাশ করতে চলেছে ড্রাগ কন্ট্রোল। সেই সঙ্গে এই ধরনের কেনাকাটায় ভিন রাজ্যের স্টকিস্টের লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করায় জোর দিয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল।