সৌমেন রায় চৌধুরী
প্রথমে চড়া সুদে টাকা ধার, তার পর সেই টাকার জন্য ক্রমাগত তাগাদা দিতে থাকা। চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে যখন কেউ সর্বশান্ত হয়েছেন, সেই সময়েই চাপ দিয়ে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কিডনি বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়া- এটাই ছিল পরিকল্পনা। অশোকনগরের কিডনি পাচার চক্রের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে ভয়াবহতার নজির।
অশোকনগরে সুদের ফাঁদের জড়িয়ে কিডনি বিক্রির জন্য চাপ যে দিত, সেই বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তার পরেই ক্রমশ সামনে আসছে তার অপকর্মের নিদর্শন। কিন্তু কী ভাবে কিডনি পাচার চক্রের অন্যতম চাঁই হয়ে উঠল শীতল? তার পিছনেও রয়েছে চমকে দেওয়ার মতো কাহিনি। কোভিডের আগে গরুর দুধ বিক্রি করে জীবন চলত শীতলের। কোভিডের সময়ে গরুর লাথি খেয়ে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তখনই নাকি রাগের চোটে গরু বেচে দিয়েছিল শীতল। তার পরেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তার। তখন ভরা কোভিড, লোকের ঘরে ঘরে টাকার টান। গরু বিক্রির টাকা নিয়ে তখন সুদের কারবার ফেঁদে বসে বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল। সুদের কারবারে ভর করেই বিপুল টাকা পকেটে ঢুকতে শুরু করে তার। গলায় ওঠে সোনার মোটা চেন।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি পাচার চক্রের পর্দাফাঁস করতে তদন্ত চালাচ্ছে অশোকনগর থানা। অশোকনগরের এক বাসিন্দা রাজীব দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিল অশোকনগর থানার পুলিশ। রাজীব লকডাউনের সময় শীতলের থেকে টাকা ধার করেছিলেন। সুদের ফাঁদে ঋণের জালে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের ভ্যান বিক্রি করে, সব সঞ্চয় ভাঙিয়েও দেনা মেটাতে পারছিলেন না। তার পরেই রাজীবের স্ত্রীর কিডনি বিক্রি করার জন্য চাপ দিয়েছিল শীতল। শুধু রাজীবই নয়, ওই এলাকায় আরও অনেকে শীতলের এই ফাঁদে জড়িয়েছিলেন। প্রথমে চড়া সুদের কারবারের অভিযোগ, সেই তদন্ত শুরু করতেই সামনে চলে আসে কিডনি পাচার কারবারের ঘটনা।
এই চক্রের অন্যতম পান্ডা গুরুপদ জানা ওরফে অমিতের সঙ্গে সল্টলেকের একটি নেফ্রোলজি সেন্টারের যোগের তথ্য উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। ওই সেন্টারের এক কর্মীর সঙ্গে ধৃত অমিতের নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হতো বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। অমিতকে জেরা করেই সল্টলেকের ওই নেফ্রোলজি সেন্টারের কর্মীকে জেরা করতে চাইছে পুলিশ। জেলায় কিডনি দানের যে আবেদনগুলি আসত, তার মধ্যে যেগুলি ‘নট রেকমেন্ড’ হতো, পরে সেগুলিই রাজ্য স্তর থেকে ‘রেকমেন্ডেড’ হয়ে যেত। কী ভাবে এটা হতো, কার নির্দেশে হতো, সেটাই এখন খুঁজছে পুলিশ। শীতলের মাথার উপর কে বা কারা ছিল, তারও খোঁজ চলছে। এখন শীতলকে ধরেই বড় মাথার খোঁজে কিডনি পাচার কান্ডের তদন্তকারীরা।