এই সময়: রীতিমতো ধর্মসঙ্কটে পড়েছে বিজেপি! ধর্ম নাকি দুর্নীতি, কোন অস্ত্রে শান দেবে তারা?
নিয়োগ দুর্নীতিতে এক লপ্তে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার ঘটনা যে নজিরবিহীন। তবে কি রণকৌশল রদবদল করার সময় এল? ধর্মের থেকে দুর্নীতি কি ’২৬–এর বিধানসভা ভোটে বেশি কার্যকরী অস্ত্র হয়ে উঠবে? ভাবাচ্ছে পদ্ম–শিবিরকে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অতীতে একাধিকবার ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। বিভিন্ন ভোটের মুখে সারদা, নারদের মতো ইস্যুকে সম্বল করে প্রচারের ঝড় তুলেও দেখেছেন পদ্ম–নেতারা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ভোটবাক্সে তার কোনও সুফল পায়নি বিজেপি। বরং দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের কাছে বারবার ভোটযুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে পদ্ম।
তবে কি বঙ্গ–রাজনীতিতে দুর্নীতি কোনও ইস্যুই নয়?
এই সংশয়ের জায়গা থেকেই বিজেপি জোর দিয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশলে। হিন্দু ভোট এককাট্টা করাই এখন গেরুয়া ব্রিগেডের একমাত্র লক্ষ্য। শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষরা তাই প্রকাশ্যেই বলে চলেছেন, ‘মুসলিম ভোটের পরোয়া আমরা করি না। আরও চার–পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির ঝুলিতে এলেই তৃণমূল ক্ষমতা থেকে উৎখাত হবে।’
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এ বছর রামনবমী নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিপুল উৎসাহ মূলত ধর্মীয় মেরুকরণ আরও তীব্র করতেই। আজ বাদে কাল রামনবমী। গেরুয়া ব্রিগেডে তার প্রস্তুতিও তুঙ্গে। দেড় কোটি হিন্দুকে রবিবার রাজপথে নামানোর টার্গেট নিয়েছেন শুভেন্দুরা। কিন্তু এ সবের মধ্যেই রাজ্য–রাজনীতি সরগরম করেছে নিয়োগ দুর্নীতিতে সুপ্রিম রায়। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬ সালের গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছে আদালত। চাকরি খুইয়েছেন ২৬ হাজার যুবক–যুবতী।
এই আবহে বিজেপি কি ধর্মীয় মেরুকরণের রাস্তাতেই অবিচল থাকবে? নাকি, প্রায়োরিটি পাল্টে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো করবে? প্রশ্নগুলি ভাসছে পদ্ম–বাগানে। এক প্রবীণ বিজেপি নেতার কথায়, ‘তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। এরপর বিরোধী দল হিসেবে আমারা পথে না–নামলে মানুষ ক্ষমা করবে না। এত বড় দুর্নীতি আগে হয়নি। আমরা এই ইস্যু হাতছাড়া করলে আরজি করের মতো এ ক্ষেত্রেও সিপিএম জায়গা দখল করবে।’ যদিও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। তিনি তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা বললেও আপতত রামনবমীতেই ফোকাস করতে চাইছেন।
বৃহস্পতিবার সুকান্ত বলেছিলেন, ‘রামনবমীর পরে আমরা তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলন শুরু করব।’ যদিও শুক্রবার দিল্লিতে বিজেপির দপ্তরে সুকান্ত এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতা সম্বিৎ পাত্র নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে তুলোধোনা করেছেন। তাঁরা এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ গোটা ক্যাবিনেটের গ্রেপ্তারিও দাবি করেছেন। সুকান্তর দাবি, ‘চাকরিহারাদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে। তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হোক। কারণ, টাকা গিয়েছে ওদের কাছেও।’
এ দিন দিল্লিতে বঙ্গভবন ঘেরাও করার চেষ্টাও করেন বিজেপি সাংসদরা। সেখান থেকে পুলিশ আটক করে সুকান্তকে। এ দিন কলকাতায় বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দুও নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। কিন্তু রবিবার রামনবমী উদযাপনে যে কোনও খামতি হবে না, সেটাও দ্ব্যর্থহীন ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। বঙ্গ–বিজেপির একাংশ অবশ্য বলছে, লোহা গরম থাকতেই মারতে হয়। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য, ‘বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই রাজ্য অচল করে দেওয়া উচিত ছিল। সেখানে আমরা রবিবার রামনবমী পর্যন্ত কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি!’