• চাকরিহারাদের হাত ধরতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওঁরা
    এই সময় | ০৫ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: ফোন নম্বর দিয়ে এক মনোবিদ ফেসবুকে লিখছেন, ‘জীবন সুন্দর। দুঃখ যেমন আসবে, তেমন চলেও যাবে। খারাপ সময়ে কোনও খারাপ সিদ্ধান্ত নেবেন না। তা হলে আগামীর ভালো সময়টা হারিয়ে যাবে। যে কোনও সমস্যায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

    অনেকেই সমব্যথী। তবে সেই সমব্যথীদের ভিড় থেকে বেরিয়ে এসেছেন এরকম কয়েকজন। ওঁরা দাঁড়াতে চান স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে। নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষা হলে, প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে থাকতে চান তাঁরা। এঁদের মধ্যে কেউ কলেজের শিক্ষক, কেউ স্কুলের। কেউ আবার টিউশন বা চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেন। এঁরা সকলেই নিখরচায় পড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। এর বাইরে আরও যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের কেউ পেশায় মনোবিদ-মনোচিকিৎসক কেউ আইনজীবী।

    সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এসএসসি-র প্যানেল বাতিল হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়া কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক পক্ষ তাক করছেন সরকারকে, অন্য পক্ষ সরাসরি দায়ী করছেন বিরোধীদের। এর কোনও পক্ষেই না গিয়ে ওঁরা সরাসরি চাকরিহারাদের হাত ধরার বার্তায় সমাজমাধ্যমে নিজেদের দেওয়াল সাজিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি, এরই মধ্যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন চাকরিহারা অনেক শিক্ষক। কেউ কেউ আগামীকাল, রবিবার থেকেই শুরু করে দিচ্ছেন ব্যাচ। হতাশার সময়েও এই ধরনের মানুষদের পাশে পেয়ে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হচ্ছেন ওই শিক্ষকেরা।

    সিস্টার নিবেদিতা গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজ ফর গার্লস-এর শিক্ষক শেখ জহিরুদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরেই নিজের দেওয়ালে পোস্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেউ ফিজ়িক্স-এর পরীক্ষা দিলে নির্দ্বিধায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। লিখেছেন, ‘সরকারি কলেজে পড়াই। আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করব সিলেবাসগুলো একবার মনে করিয়ে দেওয়ার। উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরের ফিজ়িক্সটা মোটামুটি জানি। আমাকে এক পয়সাও দিতে হবে না।’

    ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন। তিনি সকলকেই জানিয়েছেন, দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি কখন, কতক্ষণ পড়াবেন, জানিয়ে দেবেন। কল্যাণীর শাশ্বতী দত্তরায় এক সময়ে চুটিয়ে এসএসসি-র কোচিং দিতেন। তাঁর বিষয় ইংরেজি। সুপ্রিম-রায়ে তাঁর কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীরও চাকরি গিয়েছে। তিনিও ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন, ১ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার কোচিং দেবেন। বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়িতে পড়াব। কিন্তু দেখলাম দূরদূরান্ত থেকে অনেকে যোগাযোগ করছেন। ফলে ঠিক করেছি রোজ রাতে দু’ঘণ্টা করে অনলাইনেই ক্লাস নেব।’

    কলেজে অঙ্কের শিক্ষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সোনারপুরের বাসিন্দা। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যাঁরা নতুন করে আবার লড়াই করতে ইচ্ছুক, চলুন বসে পড়ি অঙ্ক বই আর খাতা নিয়ে। মাধ্যম - অনলাইন, দক্ষিণা – ১১ টাকা।’ তিনি ২ বৈশাখ থেকে পড়াবেন বলে জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর বাইরেও রয়েছেন অসংখ্য শিক্ষক। যাঁরা নিখরচায় তাঁদের নিজেদের বিষয় পড়াবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

    এর বাইরেও অন্য পেশার মানুষেরা এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই রকম রায়ের পরে মানসিক বিপর্যয় যে অবশ্যম্ভাবী তা বিলক্ষণ বোঝেন মনোবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সমাজমাধ্যমে এমন বিশেষজ্ঞেরাও বার্তা দিয়ে রেখেছেন। এক মনরোগ বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, ‘আমার ইনবক্স খোলা থাকবে। মোবাইল নম্বর দেওয়া রইল।’ আর এক মনোবিদের ঘোষণা, ‘স্পেশাল হেল্পলাইন চালু করেছি। যদি কেউ মানসিক অবসাদে ভোগেন, তা হলে ফোন নম্বরে যোগাযোগ করুন।’

  • Link to this news (এই সময়)