দিগন্ত মান্না ■ কোলাঘাট
পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় অস্থির চাকরিহারা শিক্ষকরা। হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় জীবনযাত্রার মান এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে অনেকটাই। খাদ্য, স্বাস্থ্য, ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন কোলাঘাটের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিশান্তদেব ঘটক। কথা দিয়েছেন — যতদিন না তাঁরা আয়ের কোনও সংস্থান করতে পারবেন, ততদিন তিনি তাঁদের শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করে যাবেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছে সমস্ত মহল।
কোলাঘাটের রাইন গ্রামের বাসিন্দা নিশান্তদেব ২০০৮–এ সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন। ২০১৪–য় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বারাসত জেলা হাসপাতালে চাকরি নেন। গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। সরকারি চাকরি পাওয়ার পরে সপ্তাহে একদিন নিজের গ্রামে রোগী দেখতেন। ফি নিয়ে কোনও দিনই মাথা ঘামাননি।
কোনও পরিবার ওষুধ কিনতে না পারলে নিজের টাকায় ওষুধ কিনে দিতেন। ধীরে ধীরে প্রতিটি দিনই গ্রামের মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছে তাঁকে পেয়ে বসে। ইচ্ছেপূরণের জন্য ২০১৮–য় সরকারি চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। বাড়ির কিছুটা দূরে মাছিনানে প্রতিদিন রোগী দেখা শুরু করেন। নিশান্তদেবের চেম্বারে ফি নিয়ে কোনও কড়াকড়ি নেই। দুঃস্থদের থেকে ফি নেন না। কলকাতায় ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখান তাঁর মা, স্ত্রী ও এক ছেলে থাকেন। স্ত্রীও চিকিৎসক। তিনি একটি সরকারি হাসপাতালে রয়েছেন। স্বামীর কাজে বরাবর পাশেও থাকেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় নিশান্তদেবের। সিদ্ধান্ত নেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা যতদিন না আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন, ততদিন তিনি তাঁদের সন্তানদের চিকিৎসার জন্য কোনও ফি নেবেন না। এই ইচ্ছের কথা জানিয়ে ফেসবুক ওয়ালে চিকিৎসক লিখেছেন, ‘যে ভাই-বোনদের চাকরি গেল, তাঁদের অনুরোধ, সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা করবেন না। এসে একটু জানাবেন। যতদিন না নতুন কিছু করে উঠতে পারছেন, আমায় ফি দিতে হবে না। যাঁরা ঘুষ দিয়ে অনৈতিক ভাবে চাকরি করেছেন, তেমন কেউ এই সুবিধার কথা না বললেই খুশি হব।’
চিকিৎসকের এই ঘোষণায় খুশি চাকরিহারা শিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক শিক্ষক বলেন, ‘নিশান্তদেব ঘটক গরীবের চিকিৎসক। আজ তিনি যে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, তাতে আমি খুব খুশি।’ কোলাঘাটের বাসিন্দা রাজু বেরা বলছেন, ‘ডাক্তারবাবু সারা বছরই মানুষের পাশে থাকেন।’ গত বছর ভয়াবহ বন্যার সময় নিশান্তদেব ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দুই মেদিনীপুরের বানভাসিদের কাছে। সমাজসেবা তাঁর স্বভাবে। তাঁর কথায়, ‘বহু যোগ্য শিক্ষক চাকরিহারা হয়েছেন। যতদিন না তাঁরা নতুন কাজ পাচ্ছেন, আমি পাশে থাকব।’