অশীন বিশ্বাস, কাঁচরাপাড়া
জটিল রোগকে পিছনে ফেলে মাত্র ছ'মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। নববধূকে নিয়ে একটু একটু করে সাজাচ্ছিলেন স্বপ্ন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এক নির্দেশে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে মুর্শিদাবাদের লালগোলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে শহরের স্কুলে চাকরি পাওয়া আব্দুল আলামিনের। নিজের চিকিৎসার খরচ কী করে চালাবেন, কী করেই বা পরিবার সামলাবেন সেই চিন্তায় এখন ঘুম উড়েছে তাঁর।
প্রশ্ন তুলেছেন, বীরভূমের ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের ক্ষেত্রে আদালত মানবিক কারণে চাকরিতে বহাল রাখলেও তাঁদের মতো যারা জটিল রোগ বহন করে লড়াই চালাচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে একই দৃষ্টিভঙ্গি কেন দেখানো হবে না? লালগোলার আব্দুল আলামিন চাকরি করতেন কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপ্যাল পলিটেকনিক হাইস্কুলে। অঙ্কের শিক্ষক। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্যানেলভুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদেরই বরফখানা তিনকড়ি হাইস্কুলে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম চাকরিতে তার যোগদান। দশ মাসের মাথায় কাঁচরাপাড়ার স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন।
বাড়িতে বৃদ্ধা মা মদিনা বিবি ছাড়াও এক দাদা ও এক ভাই রয়েছেন। মূলত তাঁর রোজগারের টাকাতেই সংসার চলত। দরিদ্র পরিবারে একটু একটু করে হাল ফেরার আগেই ছন্দপতন। ২০২০ সালে তাঁর পিত্তনালীর জটিল অসুখ ধরা পড়ে। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কিনা এই চিন্তায় ঘুম উড়েছিল তাঁর। ওই বছরই বড় সার্জারি হয়। চিকিৎসায় বছর বছর মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ হয়। শরীরের ধকল কমাতে কাঁচরাপাড়াতেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে থেকেই স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। ছ'মাস আগে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতেই থাকছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পর এখন অথৈ জলে আব্দুল আলামিন ও তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ।
ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ কী করে জোগাড় করবেন, পরিবারকে কী ভাবে আর্থিক সাহায্য করবেন সে চিন্তায় এখন তিনি চিন্তিত। বলেন, 'করোনার সময়ে আমার জটিল রোগ ধরা পড়ে। টাকাও কিছু সঞ্চয় করতে পারিনি। আগামী দিনে আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব কিনা সেই দুশ্চিন্তা চেপে বসেছে মনে। সোমা দাসের মতন আমারও মানবিক দিকটি দেখা হোক।'
চাকরি বাতিলের তালিকায় রয়েছেন নৈহাটি নরেন্দ্র বিদ্যানিকেতনের শিক্ষিকা অপরাজিতা পাণ্ডা। তাঁর বৃদ্ধা মা ক্যান্সারে আক্রান্ত। জটিল রোগের খরচের একটা বড় অংশ তাঁকেই বহন করতে হয়। চাকরির বেতনের অংশ থেকেই মায়ের চিকিৎসায় সাহায্য করতেন। কিন্তু আগামীতে আর মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবেন কিনা সেই দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছে মনে। চাকরি বাতিলের খবর এখনও বৃদ্ধা মাকে জানানোর সাহস হয়নি। অপরাজিতা বলেন, 'সৎ ভাবে পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছিলাম। রাজনীতির লোকেরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে খেলছে। এই খেলা বন্ধ হোক।'