এই সময়, ঝাড়গ্রাম: গ্রাম পঞ্চায়েতে চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু দশ বছর চাকরির পরে স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের শিরষা গ্রাম থেকে আসেন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের ওদোলাচুয়া এসসি হাইস্কুলে। সেখানে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন উত্তম মান্না। এর পরেই ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন শিরষায়। বিয়ে হয়। এক সন্তানও আছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রায় শোনার পরে তাঁর চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে গেল। তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না কী করবেন। বাড়ির লোনই বা কী ভাবে শোধ করবেন, আর সন্তানকে কী ভাবে মানুষ করবেন। চোখে জল নিয়ে উত্তম বলেন, ‘বিনা দোষে আমরা শাস্তি পাচ্ছি।’
২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালের পয়লা মার্চ মুর্শিদাবাদ জেলার একটি স্কুলে প্রথমে যোগ দেন উত্তম। ২০২১ সাল থেকে তিনি ওদোলাচুয়া এসসি হাইস্কুলের আসেন। এর আগে শিরষা গ্রাম পঞ্চায়েতে চাকরি করতেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘১২ লক্ষ চাকা লোন নিয়েছিলাম ব্যাঙ্ক থেকে। এখন কী ভাবে শোধ করব ভাবছি। ঝাড়গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকি। বাড়ি ভাড়াই বা দেবো কী করে।’ উত্তম আরও বলেন, ‘আমি কোনও অনৈতিক ভাবে চাকরি পাইনি। তাই আমার চাকরিযাওয়া আমি কোনও ভাবে মেনে নিতে পারছি না। এই রায় অবাস্তব, আমরা কল্পনা করতে পারিনি। শোনার পর মাথা কাজ করছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজ্য সরকার আগেই সমস্যার সমাধান করে দিলে আজ আমাদের এই দিনটি দেখতে হতো না। আমরা এ বার কী ভাবে বাঁচব?’
ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক রাজকুমার গড়াইয়েরও চোখে জল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তীর্থদ্যুতি ভাওয়াল বলেন, ‘রায়টি শোনার পরে খুবই খারাপ লাগছে।’ খাঁড়বান্ধি হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক দেবাশিস বেরা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা মুক্তা সিংহ দু’জন ২০১৬–এর প্যানেলে চাকরি পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুর প্রতিনিধি তথা জেলা যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি আর্য ঘোষের স্ত্রী হলেন মুক্তা সিংহ। আর্যকে এই বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। আর্য ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘যোগ্যদের আজ অযোগ্যদের স্তরে নামিয়ে ফেললো সুপ্রিম কোর্ট। খুবই দুঃখজনক একটি দিন শিক্ষিত সমাজের কাছে।’