• অণ্ডকোষে যন্ত্রণা? বাংলায় বাড়ছে লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, মূল দোষী স্ত্রী কিউলেক্স মশা...
    আজকাল | ০৫ এপ্রিল ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অণ্ডকোষে ব্যথা? বসতেই কষ্ট? কুঁচকিতে ফোলা? এই সব উপসর্গকে আর অবহেলা নয়। কারণ, এর পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এক ভয়ংকর নীরব শত্রু — লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২৫ সালে বাংলার একাধিক জেলা এই রোগে কার্যত বিপর্যস্ত।

    মশার কামড়ে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের কারণে অণ্ডকোষের চারপাশে জমছে তরল, পা ফুলে যাচ্ছে, যন্ত্রণা যেন থামছেই না। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা পুরুলিয়া, যেখানে ৩১৭৪ জন রোগী ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। পশ্চিম বর্ধমানে সংখ্যাটা ১১৫৫, বীরভূমেও প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই — ৯৮০ জন।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘নেগলেক্টেড ট্রপিকাল ডিজিজ’ সংক্রান্ত বিভাগে নিযুক্ত এবং বাংলার কোর্ডিনেটর ডা. প্রীতম রায় জানাচ্ছেন, ‘‘পৃথিবীতে তিন ধরনের ফাইলেরিয়াসিস রয়েছে। তার মধ্যে বাংলায় প্রধানত ছড়াচ্ছে লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস। এর থেকেই কারও লিম্ফোডিমা (পা ফুলে যাওয়া), কারও হাইড্রোসিল হচ্ছে।’’

    এই রোগে আক্রান্ত এলাকা হিসেবে বাংলার ২৪টি জেলা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে ‘মহামারী-আক্রান্ত’ বলে। তালিকায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বিষ্ণুপুর সহ আরও অনেক জেলা।

    কীভাবে ছড়ায় এই রোগ? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানাচ্ছেন, ‘‘এটি একেবারে ক্লাসিক মশাবাহিত অসুখ। স্ত্রী কিউলেক্স মশা যখন কোনও ফাইলেরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায়, আর তারপর সুস্থ কাউকে কামড়ায়, তখনই এই রোগ ছড়ায়। ঠিক যেভাবে ছড়ায় ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া।’’

    এই মশার শরীরে থাকা পরজীবীর তৃতীয় স্তরের লার্ভা মানুষের দেহে প্রবেশ করলেই শুরু হয় বিপদ। রক্তে মিশে লার্ভা ছড়িয়ে পড়ে কুঁচকি, হাত, পা, অণ্ডকোষ এমনকি মহিলাদের স্তনের লসিকা গ্রন্থিতে। ফলে ওই অংশ ফুলে যায়, হয় যন্ত্রণাদায়ক সংক্রমণ।

    ডা. প্রীতম রায় আরও জানাচ্ছেন, ‘‘প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় জ্বর, মাথা ধরা, শরীরে ব্যথা, কুঁচকি বা বগলে লালচে ফোলা। যেহেতু এই উপসর্গ অন্য অনেক রোগের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে, তাই রোগী যদি এই ধরনের এলাকা থেকে আসেন, তাঁকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি।’’

    এই রোগ ঠেকাতে দুইটি মূল কর্মসূচি চালু রয়েছে — মাস ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (MDA) এবং মরবিডিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি প্রিভেনশন প্রোগ্রাম। অ্যালবেনডাজোল ও ডায়েথিলকারবেমাজিন সাইট্রেট দেওয়া হচ্ছে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে।

    পাশাপাশি, হাইড্রোসিল আক্রান্তদের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ২০২৪ সালে এমন অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৫৯৭ জনের।

    জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এখনই উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে। একটিমাত্র মশার কামড়ই যথেষ্ট — তাই প্রতিরোধই এখন প্রধান অস্ত্র।”

    সতর্কতা, সচেতনতা ও চিকিৎসা — এই ত্রিমূর্তিতেই রুখতে হবে বাংলার নীরব আতঙ্ক, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস।
  • Link to this news (আজকাল)