এই সময়, শিলিগুড়ি: স্কুলে ইউনিট টেস্ট চলছে। বেঁধে দেওয়া পরীক্ষার সময় কী ভাবে বয়ে যাচ্ছে, সেটা বোঝাতে স্কুলের ঘণ্টা বাজাচ্ছেন এক শিক্ষিকা। ইউনিট টেস্টের পরে পরীক্ষার খাতাও গোছালেন এই শিক্ষিকারাই। তাঁরাই সকালে স্কুল গেটের তালা খুলেছেন। তার পরে একে একে সমস্ত ক্লাসরুম। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও এই কাজগুলি করতেন স্কুলের গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে লহমায় যেন বদলে গিয়েছে স্কুলের ছবিটা। শিলিগুড়ি নেতাজি গার্লস হাই স্কুলে।
চার জন অশিক্ষক কর্মীর মধ্যেই তিন জনেরই চাকরি বাতিল হয়েছে। এখন শিক্ষিকারাই স্কুলের গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীর কাজ করছেন। পড়াতে তো হচ্ছেই। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা গুপ্তের চোখে–মুখে তাই হতাশা। বলেন, ‘স্কুলের দরজা খোলারও কর্মী নেই। তাই আমাদের শিক্ষিকাদেরই হাতে হাতে মিলিয়ে এ সব করতে হচ্ছে। মেয়েগুলোকে তো আর স্কুলের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারি না।’ এই স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা হাজার দুয়েক। ২০১৮ সালে একসঙ্গে স্কুলে চার জন অশিক্ষক কর্মচারী কাজে যোগ দেন। অজস্র কাজ ছিল তাঁদের— ছাত্রীদের নাম রেজিস্ট্রেশন থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি, রেজাল্ট প্রকাশ থেকে ক্লাসের শেষে ঘণ্টা বাজানো। অন্য সমস্যায় পড়েছে নেতাজি বয়েজ় হাই স্কুল।
এই প্রতিষ্ঠানের ভূগোল, ইংরেজি, রসায়ন এবং বাণিজ্যে একজন করে শিক্ষক ছিলেন। এঁদের চার জনের গতকাল থেকে ‘ছুটি’ হয়ে গিয়েছে। অশিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা পাঁচ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে দুইয়ে। তবু দু’জন অশিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। কোনও মতে কাজ চলছে। কিন্তু এত ছাত্রের জন্য বিকল্প ইংরেজি, ভূগোল, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক কোথা থেকে মিলবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক রাজীব ঘোষ। বলেন, ‘কেমিস্ট্রি না-হয় আমি সামলে নেব। আমিও রসায়নের শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলে ক্লাস নিতে পারতাম না। এখন আর পারব না বললে তো চলবে না। কিন্তু অন্য তিনটে বিষয়ের শিক্ষক কোথা থেকে পাব?’
শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের ছয় শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। শিলিগুড়ি বয়েজ় হাই স্কুলেও কোপ পড়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শকের দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রীর অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি, সেখান থেকে শিক্ষকদের এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা তো একটা নয়। যে সমস্ত শিক্ষকেরা উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছিলেন, তাঁদের বিকল্প কোথা থেকে মিলবে? আগামী ১৯ এপ্রিল ইউপিএসসি–র পরীক্ষা হবে শিলিগুড়িতে। পরীক্ষায় নজরদারির জন্য শিক্ষকদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে অর্ধেকের নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। সেই তালিকা নতুন করে তৈরির জন্য শুক্রবার মহকুমাশাসকের দপ্তরে দৌড়েছিলেন জেলা স্কুল পরিদর্শক রাজীব প্রামাণিক। দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা নিজে থেকে কিছুই করতে পারব না। শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’