কৌশিক দে, মালদা
এক দিকে স্বামী বিয়োগের যন্ত্রণা, অন্য দিকে দেহ সৎকারের টাকার অভাব। সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬২ বছরের স্বামীর। ফলে বাড়িতে একমাত্র সদস্য বৃদ্ধা স্ত্রী বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। দেহ শ্মশানে কে নিয়ে যাবেন, কে–ই বা গাড়ি ভাড়া দেবেন? পুরাতন মালদা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলবাড়ি মির্জাপুরের এমন পরিস্থিতি দেখে পাড়ার ব্রাহ্মণ পুরোহিতের শেষকৃত্যের কাজে এগিয়ে এলেন পড়শি সেলিম, আকবর, তৌফিকরা। শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এলাকার বাসিন্দা বিদ্যাধর ঝা (৬২)–র।
সেলিমদের কথায়, ‘ছোট থেকে আমরা ওঁকে দেখে আসছি। কখনও কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। ছেলেমেয়েরা ভিন রাজ্যে থাকেন। ফলে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরাই সব রকম উদ্যোগ নিই। কাঁধে নিয়ে শ্মশানে যাই।’
পরিবারের আর্থিক অবস্থায় দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া–সহ অন্যান্য আচার নীতি পালনে সঙ্কটে পড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী শিখা। তাই স্বামীর দেহ আগলে বসেছিলেন তিনি। ঠিক তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সেলিম শেখ, আকবর আলি, তৌফিক শেখরা। তাঁদের উদ্যোগে গাড়ি ভাড়া করে দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সৎকার, পুরোটাই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
মৃত্যুর খবর পেয়ে পুরোহিতের বাড়ি সমবেদনা জানাতে যান তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলার শ্যাম মণ্ডল। সেখানে তিনি দেখতে পান কয়েকজন মুসলিম যুবক পুরোহিতের শবদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের খাট তৈরি করছেন। অবাক হয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রীতি যে আজও বেঁচে রয়েছে, সেই প্রমাণ দিলেন ওঁরা।’ মৃতের পরিবারকে সব রকম ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেন কাউন্সিলার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত বিদ্যাধর দীর্ঘদিন ধরেই সেবাইতের কাজ করতেন। কিন্তু বেশ কয়েক মাস অসুস্থতার জন্য শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর দুই ছেলে ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। পাশাপাশি দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে বিহার ও অসমে। ফলে মৃত্যুর খবর পেলেও তাঁরা বাড়ি পৌঁছতে পারেননি। সেলিমরাই অচৈতন্য অবস্থায় বিদ্যাধরকে স্থানীয় মৌলপুর সরকারি গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, অনেকক্ষণ আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে সৎকারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করে ইংরেজবাজারের সাদুল্লাপুর শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন পাড়ার ছেলেরা। পাশাপাশি তাঁরা আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থাও করেন।