• ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের প্রভাব কয়েক হাজার স্কুলে
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গোটা প্যানেল বাতিল করেছে শীর্ষ আদালত। এর ফলে রাজ্যের বহু স্কুল কার্যত শিক্ষকশূন্য হয়ে গিয়েছে। কোথাও স্কুলের তালা খুলতে হচ্ছে শিক্ষককে, আবার কোথাও একমাত্র শিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় তালা ঝুলছে স্কুলে, কোনও স্কুলে আবার একাধিক বিষয়ে শিক্ষক সংকট তৈরি হয়েছে, আবার কোনও শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে বিজ্ঞান বিভাগ। ঠিক কত স্কুলে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তারই একটি ইঙ্গিত মিলেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে।

    স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নবম-দশম শ্রেণির ১২,৯৪৬ জন শিক্ষক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ৫,৭৫৬ জন শিক্ষক, ২,৪৮৩ জন গ্রুপ সি কর্মী এবং ৪,৫৫০ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি গিয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকজন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রভাব পড়তে পারে ৩,১২৫টি স্কুলে। নবম-দশম স্তরে পড়াতেন এমন শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের প্রভাব পড়তে পারে ৫,৪২৬টি স্কুলে। এর পাশাপাশি গ্রুপ সি ও গ্রপ ডি কর্মীদের চাকরি যাওয়ায় প্রভাব পড়তে পারে যথাক্রমে ২,২১৫টি এবং ৩,৮৮৫টি স্কুলে। তবে এমন হাজার হাজার স্কুল রয়েছে, যেখানে একাধিক শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। সেই চাকরি যাওয়ার প্রভাব ঠিক কত স্কুলে পড়েছে, সেই চূড়ান্ত সংখ্যাটা এখনও জানা যায়নি।

    এদিকে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁরা এপ্রিল মাসের বেতন পাবেন কি না, তা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বরখাস্তের নোটিস হাতে না পাওয়ায় আদালতের রায় শোনার পরও তাই শুক্র-শনিবারও স্কুলে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। কিন্তু বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয় তাঁদের মনে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘বেতনের বিষয়টি বলতে পারব না। কমিশন নিয়োগকর্তা নয়। কমিশন বেতন দেয় না।’ ওই শিক্ষকদের বেতন নিয়ে স্কুলগুলিকে স্পষ্ট করে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ দেয়নি বিকাশ ভবন। একাধিক স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

    বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষা দপ্তর থেকে বেতন নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। যেহেতু শিক্ষা দপ্তরের কমিশনারের এই কাজটা করা উচিত, তাই আমরা কমিশনারকে এই বিষয়ে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ রাজ্যে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং পোষিত স্কুলের শিক্ষকেরা বেতন সেই মাসের শেষ দিনে পান। সময়মতো যাতে প্রত্যেকে বেতন পান, সেই জন্য স্কুলের তরফে ‘রিকুইজিশন’ সেই মাসেরই ১০ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পোর্টালে ‘আপলোড’ করতে হয়। এই ‘রিকুইজিশন’ জমা করতে গিয়েই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এপ্রিলের বেতন পাওয়ার তালিকায় চাকরিহারাদের রাখবেন কি না, তা নিয়েই ধন্দে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

    নির্দিষ্ট সরকারি পোর্টালে সময়মতো সেই তথ্য ‘আপলোড’ করা না হলে নিয়মিত শিক্ষকদেরও বেতন পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে খবর। আপাতত প্রযুক্তিগত কারণে বন্ধ রয়েছে এই পোর্টাল। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, এখন যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। অবশ্য গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে শিক্ষা দপ্তরের পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপর।

    সূত্রের খবর, আদালতের রায় কার্যকরী করতে রাজ্য সরকার নির্দেশ দেবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। সেই নির্দেশ পেলে এসএসসি আবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে ওই ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর সুপারিশ বাতিল করার আর্জি জানাবে। এরপর সংশ্লিষ্ট স্কুল, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আলাদা আলাদা ভাবে চিঠি দিয়ে নিয়োগ প্রত্যাহার করবে পর্ষদ।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)