• সব্জি বিক্রেতার ছেলে শুকদেবের ‘রূপকথার উত্থান’ খাদের কিনারে, ‘আমরা শাসক-বিরোধীর রাজনীতির শিকার’
    বর্তমান | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ‘শাসক তো দুর্নীতি করেছেই, বিরোধীরাও সমান দোষী। বিরোধীরা বেনোজল খোঁজার বদলে প্যানেল বাতিলে সওয়াল করেছেন। আমরা বৃহত্তর রাজনীতির শিকার।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে থামলেন রানাঘাটের নাসারা এলাকার বাসিন্দা শুকদেব দাস। ২৬ হাজার চাকরিহারার তালিকায় রয়েছেন তিনিও। সব্জি বিক্রেতার ছেলে হওয়ায় কোনওদিনই জীবন সহজ পথে হাঁটেনি। ঘরের নড়বড়ে বাঁশের উপর অস্থায়ী ছাউনির ঘরে বসেই করতে হয়েছে লেখাপড়া। অথৈ জল থেকে মেধার জোরে উঠে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, কোনও দোষ না করা সত্ত্বেও ভারতের রাজনীতি তাঁকে ফের অথৈ জলে টেনে নামাল। হল না বিচার! হুগলির বাঁশবেড়িয়া মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন শুকদেব দাস। রানাঘাটের নাসরা এলাকার বাসিন্দা তিনি। বাড়ির সদস্য বলতে স্ত্রী এবং সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা মা। বাবা ছিলেন সব্জি বিক্রেতা। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। চার ভাইবোনের অভাবের সংসারে ভাতের সঙ্গে নুন কিনতে একসময় মাকেও চরকায় সুতো কাটতে হতো। শুকদেব ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। ২০০৭ সালে রানাঘাট কলেজ থেকে স্নাতক এবং তারপর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চোখ ধাঁধানো নম্বর নিয়ে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। শিক্ষকতার পেশায় যাবেন জেনেই করেছিলেন বিএড। ২০১৬ সালের প্যানেলে তাঁর চাকরি পাকা হয়। এর দু’বছর পর ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাঁশবেড়িয়া হাইস্কুলে রসায়নের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে তাঁর। শনিবার বাড়িতে বসে শুকদেববাবু বলেন, ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করি। লেখাপড়া শিখতে মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে পড়তে যেতাম। প্রাইমারি, আপার প্রাইমারির মতো একাধিক সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়েছিলাম। সেগুলিতে যোগ না দিয়ে এই চাকরিটাই করছিলাম। কিন্তু রাজনীতি আমাদের শেষ করে দিল। শাসকদল তো ক্ষমার অযোগ্য দুর্নীতি করেছেই। কিন্তু সিপিএম-বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলিও আমাদের হাতিয়ার করে রাজনীতি করেছে। আর সেই বৃহত্তর রাজনীতির শিকার আমরা। তারাও শাসকের মতো সমান দোষী। তাঁরা অযোগ্য বাছাইয়ের পরিবর্তে পুরো প্যানেল বাতিল করার জন্য সওয়াল করেছেন। চাকরিটা পেয়ে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে দরমা-ছাউনির বাড়ি ছেড়ে তৈরি করা শুরু করেন পাকা বাড়ি। ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছিলেন মোটা টাকা লোন। কমবেশি মাথায় এখন ৩০ লক্ষ টাকার দেনা। কিন্তু পরের মাসে লোন শোধ করবেন কীভাবে? উত্তর নেই। শুকদেববাবু বললেন, দু’মাস বাদে ব্যাঙ্ক এসে বাড়ি থেকে বের করে গাছতলায় দাঁড় করিয়ে দেবে। আমার কিছু করার না থাকলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাব। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভালো। আমরা বিচার পেলাম না। শুধু আমাদের কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধীর মধ্যে এক প্রস্থ রাজনীতি হয়ে গেল।

    আপাতত কী ভাবছেন? বাঁশবেড়িয়া মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের এই সদ্য প্রাক্তন শিক্ষক বলেন, আপাতত ৭তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। অস্বীকার করার জায়গা নেই, শাসকের দুর্নীতির জন্য আমাদের এই অবস্থা হলেও আপাতত শাসকই ভরসা। দেখা যাক, কী হয়!
  • Link to this news (বর্তমান)