• মুরারইয়ে নিখোঁজ যুবকের অ্যাসিডে পোড়া দেহ উদ্ধার
    বর্তমান | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ফোন পেয়ে টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তারপর খোঁজ মেলেনি। দু’দিন পর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাগলা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার ধার থেকে থেকে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হল। মৃতের নাম নুর ইসলাম শেখ ওরফে সাদ্দাম(২৯)। বাড়ি মুরারই থানার বাহাদুরপুর গ্রামের বাগানপাড়ায়। শনিবার সকালে ঘাস ও লতাপাতায় ঢাকা তাঁর ফুলেফেঁপে ওঠা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মৃতদেহের গলায় বেল্ট জড়ানো ছিল। বাঁ হাত ছিল ভাঙা। মুখমণ্ডল ও শরীরের একাংশ অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের দাবি, তাঁকে খুন করে পরিচয় গোপন করতে অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিস দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। মৃতের পরিবার জানিয়েছে, অবিবাহতি সাদ্দামের গ্রামেই মোবাইল রিপেয়ারিং ও সাইবার ক্যাফে রয়েছে। গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁকে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা তুলে তিনি শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতেন। এছাড়া অনলাইনে আরও কাজকর্ম করতেন। টাকা ধারও দিতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গ্রামে বসা মেলা দেখে পাঁপড় কিনে বাড়ি ফেরেন। মৃতের বাবা কদম রসুল বলেন, মেলা থেকে ফিরে ছেলে ঘরে বসেছিল। রাত ১০টা নাগাদ ওর মোবাইলে একটি ফোন আসে। আমি ওর পাশেই ছিলাম। অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়, আমি ব্রিজের কাছে রয়েছি। দেনাপাওনা যা আছে হিসেব করে নিয়ে আসতে বলে। সঙ্গে কিছু টাকা নিয়ে আসার কথাও জানায়।  এরপরই ছেলে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায়। রাত হয়ে গেলেও ছেলে না ফেরায় ভেবেছিলাম, গল্প করছে। এরই মধ্যে আমাদের স্বামী ও স্ত্রীর চোখ লেগে যায়। সকালেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি।

    তিনি বলেন, আমার ছেলের ডায়েরিতে কার কাছে কত টাকা পাবে, সেই সব লেখা রয়েছে। এদিন বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে ব্রিজের কাছে রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে একটি মানুষের দু’টি পা দেখতে পান স্থানীয়রা। লতাপাতা সরাতেই জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা সাদ্দামের ফুলেফেঁপে ওঠা মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। ওর বাঁ হাত ভাঙা ছিল। গলায় বেল্ট জড়ানো ছিল। মুখমণ্ডলে অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিডে দাঁতগুলি ঝরে গিয়েছে। শরীরের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। ওর সঙ্গে থাকা মোবাইলও ছিল না। জানা গিয়েছে, কদম রসুলের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাদ্দামই বড় ছিল। মৃতের ভাই আলি আসগর শেখ বলেন, বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছি। আরও কিছু টাকা দিয়ে ভালো বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নিই। তাই দাদা যাদের টাকা ধার দিয়েছিল, তাদের কাছে টাকা ফেরত চাইছিল। কিন্তু, অনেকেই টাকা ফেরত দিতে চায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে কেউ ফোন করে দাদাকে ডাকে। অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় মোবাইলে ফোন করি। কিন্তু, তা বন্ধ ছিল। পুলিসকে সমস্ত কিছুই জানিয়েছি। আমাদের অনুমান যাদের কাছে টাকা পেত তাদেরই কেউ দাদাকে নৃশংসভাবে খুন করেছে। পুলিস দোষীদের গেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক।  টাকাপয়সা সংক্রান্ত লেনদেন নাকি এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা জানতে পুলিস তদন্ত করেছে। রামপুরহাটের এসডিপিও গোবিন্দ শিকদার বলেন, খুনের মোটিভ জানতে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)