• গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্প: অরূপের পর এবার লোকসভায় সরব সৌমিত্রও
    বর্তমান | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর পর এবার গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্প নিয়ে লোকসভায় সরব হলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। জেলার উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে একযোগে সোচ্চার হতেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন। যদিও তাঁর প্রস্তাবিত কিছু প্রকল্পে রাজ্য সরকার বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদেরও তাঁকে সমর্থন করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। সৌমিত্রবাবু আগে তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। ফলে তৃণমূলের সাংসদের প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় তিনি সরব হওয়ার পর থেকেই বাঁকুড়ার রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। 

    অরূপবাবু বলেন, গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে প্রথমে রাজ্যের অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে তা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাঁকুড়া-১ ও ২, ছাতনা, ওন্দা, পত্রসায়র এবং বিষ্ণুপুর ব্লকের কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। ফলে দ্রুত যাতে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তারজন্য আমি রাজ্যের সেচমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছি। বিজেপি সাংসদ আমার প্রস্তাবকে কার্যত সমর্থন করে লোকসভায় সরব হয়েছেন। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর রাজ্যের সাংসদদের একযোগে চাপ সৃষ্টি করা উচিত। 

    সৌমিত্রবাবু বলেন, বাঁকুড়া তথা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের প্রশ্নে আমি রাজনৈতিক রং দেখি না। ফলে অরূপবাবুর প্রস্তাব নিয়ে সরব হতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে বিষ্ণুপুরের প্রকাশ বাঁধ ও পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি সংক্রান্ত আমার প্রস্তাবে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার আমল দেয়নি। 

    বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত অগস্থি বলেন, মোদিজির নেতৃত্বে দেশজুড়েই উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের দলের সাংসদরাও উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি করেন না। ফলে সৌমিত্রবাবুর সরব হওয়া নিয়ে আমরা ভুল কিছু দেখছি না। 

    স্থানীয় বাসিন্দা সায়ন্তন চট্টোপাধ্যায়, মলয় ঘোষ বলেন, খরা প্রবণ বাঁকুড়ায় সেচ পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য বড় প্রকল্পের প্রয়োজন। তা রূপায়ণের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দুই দলের জনপ্রতিনিধিরা একযোগে কাজ করলে ভালো হয়। উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনৈতিক ভেদাভেদ না করাই ভালো। 

    উল্লেখ্য, বাঁকুড়া শহরের দু’পাশে গন্ধেশ্বরী নদী ও দ্বারকেশ্বর নদ বয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ বাম আমলে বহু বার চর্চা হলেও গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্প রূপায়িত হয়নি। তৃণমূল জমানাতেও ওই প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি। এব্যাপারে অবশ্য এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ না করায় প্রকল্প রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে না বলে রাজ্যের অভিযোগ। দ্বারকেশ্বর নদের জলধারণ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। তুলনামূলকভাবে গন্ধেশ্বরী নদীর কলেবর অনেক কম। ওই নদীতে সারাবছর জল থাকে না। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় গন্ধেশ্বরী নদী মজে গিয়েছে। ফলে বর্ষার সময় দু’কূল ছাপিয়ে নদীর জল জনপদ ভাসিয়ে দেয়। সেই জল ধরে রাখতে পারলে সেচের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানীয় জলেরস্তরও অনেক উপরে উঠে আসবে। সরাসরি সেচের পাশাপাশি অগভীর নলকূপ বা সাবমার্সিবলের সাহায্যে জল উত্তোলন সহজ হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)