৭৪ বছর আগে শুরু কুমোরটুলির বাসন্তী আরাধনা, উন্মাদনায় ভাঁটা পড়েনি আজও
বর্তমান | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দুর্গাপুজোর সময় কাজের চাপে কুমোরটুলির শিল্পীদের নাওয়া খাওয়া পর্যন্ত মাথায় ওঠে। পঞ্চমী পর্যন্ত চলে প্রতিমা সরবরাহের কাজ। ফলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় সেভাবে অংশ নেওয়াই হয়ে ওঠে না কুমোরটুলির শিল্পীদের। কাজের চাপে পুজোর আনন্দ কার্যত অধরাই থাকে। সে কারণে শারোদৎসবের বিকল্প হিসেবে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা শিল্পীরা চৈত্র মাসের নবরাত্রিতে শুরু করেছিলেন বাসন্তী দুর্গাপুজো। সেই পুজো শুরু হয়েছিল ৭৪ বছর আগে।
স্বাধীনতার পর বাংলা ভেঙে টুকরো হল। পূর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে মানুষ কলকাতায় এসে উপস্থিত হলেন আশ্রয়ের খোঁজে। পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে আসা সেই মানুষরা কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে থাকা শুরু করেন। এই ভাবেই ঢাকা বিক্রমপুরের একদল মৃৎশিল্পী এসে উপস্থিত হন উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতে। মূর্তি গড়া শুরু করলেন আর পাশাপাশি গড়লেন নিজেদের সংসার। ওপার বাংলার শিল্পী রাখাল পাল, নেপাল পাল, শ্রীকৃষ্ণ পাল, ব্রজেশ্বর পাল, মোহনবাঁশিদের হাত ধরে শুরু হল বাসন্তীপুজো। এই পুজো বাঙালপট্টির পুজো বলেই পরিচিত। আজও সেই প্রাচীন নীতি মেনে পূজো করছে বর্তমান প্রজন্ম। প্রতিবছর একজন করে শিল্পী নিখরচায় মূর্তি তৈরি করে দেন। এ বছর প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব তপন রুদ্রপালের পরিবারের হাতে।
ষষ্ঠীতে শুরু হয় পুজো। অষ্টমীর দিন বাসন্তী পুজোর সঙ্গে আলাদা মূর্তি তৈরি করে হয় অন্নপূর্ণা ও চণ্ডীর আরাধানা। নবমীতে কুমোরটুলির শিল্পীদের পরিবার সেই শুরুর দিনের মতো এখনও একসঙ্গে প্রসাদ খান। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির বাসন্তী দুর্গা আজ পূর্ববঙ্গীয় শিল্পীদের মধ্যে শুধু সীমাবদ্ধ নেই। সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘৭৫ বছরের এই পুজো বর্তমানে সমগ্র কুমোরটুলির শিল্পীদেরই পুজোয় পরিণত হয়েছে।’