রামনবমী উপলক্ষে কলকাতা সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে আজ শোভাযাত্রা বের হবে। রামনবমীর মিছিল ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের মুখে। তবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ঠিকঠাক রাখতে তৎপর রয়েছে পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন। কলকাতায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার পুলিশকর্মীকে নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। আর সারা রাজ্যে ২৯ জন আইপিএস অফিসার বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্যের ১০টি জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটকে সংবেদনশীল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আসানসোল, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। এদিকে রামনবমীর আগের দিন, শনিবার কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘কড়াকড়ি করে মিছিল বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না। গোটা দেশের মতো বঙ্গেও রামনবমী পালিত হবে।’
শনিবার কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় যান পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। কাশীপুর থেকে রবীন্দ্রসরণি, পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ সর্বত্র পুলিশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন তিনি। মনোজ বর্মা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রামনবমী পালন করুন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করুন। আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সিসিটিভি এবং ড্রোনেও নজরদারি চলবে। কোথাও কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সকলকেই কলকাতা পুলিশ স্বাগত জানাচ্ছে রামনবমী পালন করার জন্য। সাধারণ মানুষের যাতে কোথাও অসুবিধা না হয়, সেকথা মাথায় রাখতে হবে মিছিলের উদ্যোক্তাদের। কোথাও কোনও শোভাযাত্রাকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে, কলকাতা পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশ সূত্রে খবর, শহর কলকাতার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বড় মিছিলে ডিসি, যুগ্ম পুলিশ অধিকর্তা প্রমুখ পদমর্যাদার আধিকারিকেরা উপস্থিত থাকবেন। ওসি, ডিসি, এসি, জয়েন্ট সিপি-সহ পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মিছিলের পথে থাকা বহুতলগুলির ছাদেও নজরদারি চালাবে পুলিশ। এর আগে রামনবমীর মিছিলে ছাদ থেকে ইট ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। মিছিলের পথে যাতে ইট বা পাথরকুচি পড়ে না থাকে, তা-ও থানাকে দেখতে বলেছে লালবাজার। ড্রোন, সিসিটিভি এবং ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশকে বডি ক্যামেরা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রামনবমীতে কলকাতায় মোট ৫৯টি মিছিল বের হবে। এর মধ্যে পাঁচটি বড় মিছিল। এই মিছিলগুলি শুরু হবে এন্টালি, পিকনিক গার্ডেন, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, হেস্টিংস, কাশীপুর থেকে। প্রত্যেকটি মিছিলেই থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। মিছিলের আগে ও পরে হাঁটবে পুলিশ। থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশের গাড়িও। আশপাশের রাস্তাগুলিতে থাকবে পুলিশের টহলদার গাড়ি। একমাত্র নির্দিষ্ট রুটেই মিছিল করা যাবে। অন্য রুটে কেউ মিছিল করেন, তাহলে পুলিশ সেই মিছিল আটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মিছিলের সঙ্গে একাধিক ভিডিওগ্রাফার রাখা হচ্ছে, যাতে পুরো মিছিলের উপরে নজরদারি চালানো যায়। উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেও ব্যাপক পুলিশি নজরদারি শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ কুমার যাদব বলেন, ‘রামনবমী ঘিরে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে, তার জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।’ উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, কোচবিহার ও মালদহে বড় আকারে রামনবমী উদযাপন হয়।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, আজ সকাল থেকেই তাদের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে। রামনবমীর মিছিলে শহরের রাজপথে অস্ত্র হাতে হাঁটলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে আগেই জানিয়েছেন কলকাতার সিপি মনোজ বর্মা।