• রিভিউ আর্জি জানাতে সুপ্রিম কোর্টের পথে কর্মহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা
    এই সময় | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিলের বিরুদ্ধে এ বার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে চলেছে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। ইতিমধ্যেই আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কয়েকজন দিল্লিতেও পৌঁছে গিয়েছেন। তবে শীর্ষ আদালতে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের বিষয়ে রিভিউ পিটিশন নিয়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তর এবং এসএসসি শনিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। অর্থাৎ, রিভিউ পিটিশন কে দায়ের করবে— রাজ্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নাকি কমিশন, তা নিয়েই আপাতত জল্পনা চলছে।

    রাজ্যের সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা নেয় এসএসসি এবং ২০১৬ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, প্যানেল প্রকাশ এবং নিয়োগের সুপারিশ কমিশনই করেছিল। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সেই কারণে শিক্ষা দপ্তর চাইছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল মামলায় এসএসসি–ই শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করুক। তা নিয়ে অবশ্য সরকারি আধিকারিকদের মধ্যেই ভিন্নমত আছে। শিক্ষা দপ্তরের এক কর্তার বলছেন, ‘কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ গত বছরের ২২ এপ্রিল নিয়োগ প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল করার পরে রায় চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ মামলা করেছিল শীর্ষ আদালতে। এখনও রিভিউ পিটিশন রাজ্য, পর্ষদ এবং কমিশনের একসঙ্গেই করা উচিত। তাতে আবেদন জোরদার হবে।’

    যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ‘রিভিউ পিটিশন বা এই সব টেকনিক্যাল বা লিগ্যাল প্রশ্নগুলো তো এসএসসি–র ব্যাপার। কমিশন আইনি প্রক্রিয়া মেনেই রিভিউ পিটিশন করতেই পারে। এ ব্যাপারে ওরা যদি স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আইনি সাহায্য চায়, তবে সেই আইনি পরামর্শ নিশ্চয়ই দেওয়া হবে।’ যোগ্য প্রার্থীরা অনেকে বলছেন— এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও রাজ্য সরকার এখনও যোগ্য শিক্ষক–শিক্ষিকাদের পাশে নেই। যদিও এ নিয়ে শনিবার আর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

    মঞ্চের কনভেনর মেহবুব মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আমাদের প্রাথমিক আলোচনা সাড়া দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়েই স্পষ্ট, ২৫,৭৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে দুটো ভাগ আছে। একদল অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত। সেই সংখ্যাটা ৬২৭৬ জন। তাঁদের শীর্ষ আদালত টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁরা এসএসসি–র পরীক্ষাতে বসতে পারবেন না। বাকি আমরা (১৯,৪৭৬ জন)।’

    তাঁর সংযোজন, ‘আমাদের বেতন হিসেবে পাওয়া টাকা ফেরত দিতে বলেনি আদালত। আমাদের নতুন নিয়োগে বয়সের ছাড়ও দিতে বলেছে। যাঁরা অন্য চাকরি ছেড়ে এসে ২০১৬ সালের নিয়োগে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের তিনমাসের মধ্যে সেই চাকরিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগও দিয়েছে। এমনকী সেই শূন্যপদ এখন না থাকলে, তাঁদের জন্য সুপার নিউমেরারি পদ্ধতিতে এককালীন নতুন পদ তৈরি করেও নিয়োগ দিতে রাজ্য বাধ্য থাকবে— এটাও বলেছে আদালত।’ সেই যুক্তিতেই আবার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিভিউ পিটিশন করতে চান ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা।

    কর্মহীন শিক্ষিকা তাপসী শাসমলের কথায়, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়েই স্পষ্ট, ১৯,৪৭৬ জনের যোগ্যতার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতেরও কোনও প্রশ্ন নেই। তাই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি–র নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আমাদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। সেটা না–করে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের মতোই সুপ্রিম কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করালে ভালো হতো। আমরা তেমনই আর্জি জানানোর কথা ভাবছি সুপ্রিম কোর্টে।’

  • Link to this news (এই সময়)