এই সময়: এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। এ বার গত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মামলার শুনানি শুরুর বিষয়ে আর্জি জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন মামলাকারীরা। বর্তমানে প্রাথমিকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মামলাটির বিচার ঝুলে রয়েছে হাইকোর্টে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে।
যে মামলায় ২০১৬ সালে ৩২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বেআইনি বলে খারিজ করে দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই রায় চ্যালেঞ্জ হয় ডিভিশন বেঞ্চে। আবার ২০১৪ সালের টেটের ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলার অভিযোগে দায়ের মামলা বর্তমান সূচি অনুযায়ী শুনানি হওয়ার কথা বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে। সেই মামলার রায়ের উপরে নির্ভর করছে প্রায় ৬০ হাজার প্রাাথমিক শিক্ষকের চাকরির ভবিষ্যৎ। যার মধ্যে রয়েছেন ২০১৬–য় চাকরি পাওয়া সেই ৩২ হাজারও।
২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের নিয়ে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়। চাকরি পান প্রায় ৪৩ হাজার। সেই নিয়োগে একাধিক ত্রুটির অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা হয়। এই মামলায় অভিযোগ ওঠে চাকরি পাওয়াদের মধ্যে ৩২ হাজারই ‘অপ্রশিক্ষিত’। তৎকালীন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি চাকরি পাওয়া ও ইন্টারভিউ নেওয়া বেশ কয়েক জনকে আদালতে ডেকে বয়ান রেকর্ড করান। তাঁদের বক্তব্যে বিস্তর গোলমাল ও নিয়োগে একাধিক ত্রুটি সামনে আসায় ২০২৩ সালের ১২ মে ওই ৩২ হাজার শিক্ষককে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। সেই রায় চ্যালেঞ্জ হয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে।
ডিভিশন বেঞ্চ বরখাস্তের নির্দেশ স্থগিত করলেও, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে মামলা গেলে চাকরি পুরোপুরি বাতিল হওয়ার আগে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়। তবে চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বক্তব্য হাইকোর্ট শুনে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। এই মামলার অন্যতম আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, ‘বর্তমানে সেই মামলা ঝুলে রয়েছে বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। আমরা আগামী সোমবার দ্রুত মামলাটি শুনানি শুরুর আবেদন করব।’
এর বাইরে ২০১৪ সালের টেটের ক্ষেত্রে ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলার মামলাও এখন ঝুলে রয়েছে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে। আইনজীবীদের মতে, ২০২৩ সালের পরে সেই অর্থে আর ওই মামলার উল্লেখযোগ্য শুনানি হয়নি। মামলার অন্যতম আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০১৪ সালের টেটের উপর পরের সব নিয়োগ হয়েছে। ফলে ওই মামলার রায়ের উপরে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষকের চাকরির ভাগ্য নির্ভর করছে। যত দ্রুত সম্ভব এই মামলার শুনানির জন্য আবেদন করব।’
উল্লেখ্য, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মতোই রাজ্যে প্রাথমিকে নিয়োগেও এমন নানা দুর্নীতির অভিযোগে দফায় দফায় বেশ কয়েকশো চাকরি গিয়েছে বিভিন্ন আদালতের নির্দেশে। তার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই সব মামলাও গত বছর মে মাসের পর আর শুনানি হয়নি। প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির মামলার এক আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘এই মামলাগুলির বাইরেও ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রাথমিকের সব টেটের প্রশ্ন ভুলের অভিযোগের মামলাগুলি ঝুলে রয়েছে।’