• দুঃসাহসিকভাবে পরপর গণ্ডার হত্যা, এবার চোরা শিকারিদের কিংপিনকে কড়া সাজা আলিপুরদুয়ার আদালতের...
    আজকাল | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্যপ্রাণ হত্যার অভিযোগে ফের চোরা শিকারি চক্রের কিংপিন রিকচ নার্জিনারীকে কড়া সাজা দিল আলিপুরদুয়ার আদালত। রিকোচ বন্যপ্রাণ হত্যার চক্রের একজন শার্প শুটার। জলদাপাড়া জঙ্গলে গণ্ডারের মুখোমুখি হয়ে, দুঃসাহসিকভাবে গণ্ডারের দু'চোখের মাঝখানে গুলি করত সে। এক গুলিতেই প্রাণ কাড়তে পারদর্শী ছিল সে। 

    রিকোচ মূলত অসমের বাসিন্দা। অসমেও তার বিরুদ্ধে চোরা শিকারের একাধিক মামলা রয়েছে। জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলে বন্যপ্রাণ হত্যার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অভিযুক্ত রিকচ নার্জিনারী। সেই সময় রিকোচ আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা পশ্চিম শালকুমার এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালে বন্যপ্রাণ হত্যার একটি মামলায় রিকোচকে তিন বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছিল। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সে মণিপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করে। সেখানে আরও একটি চোরা শিকারি দলের সঙ্গে যুক্ত হয় রিকোচ। বন্দুক চালানোর পাশাপাশি সেই একাধিক ভাষায় পারদর্শী ছিল। ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে বন্যপ্রাণের দেহাংশ পাচারে তার যথেষ্ট সুবিধা হত। সেই সময় সে অসম থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এসে উত্তরবঙ্গে চোরা শিকার শুরু করে। 

    জলদাপাড়ার জঙ্গলে চোরা শিকার করে হাতির দাঁত ও একশৃঙ্গ গণ্ডারের সিং ভুটান, চিনে আন্তর্জাতিক স্তরে পাচার শুরু করে। ধীরে ধীরে সে উত্তরবঙ্গে চোরা শিকারি চক্রের কিংপিন হয়ে ওঠে। সমগ্র উত্তরবঙ্গে তার চক্র ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে ২০১৯ এবং ২০২১ সালের মাঝে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণ হত্যার ঘটনা ঘটে জলদাপাড়ার জঙ্গলে। সেই মামলাতে রিকোচের বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করেছিল আলিপুরদুয়ার আদালত।

    গত ২০২৪ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি জলদাপাড়া বনদপ্তরের তৎপরতায় আলিপুরদুয়ার জেলার মেন্দাবাড়ি জঙ্গল এলাকা থেকে হাতির দাঁত সহ কুমার গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত রায় এবং ময়নাগুড়ির বাসিন্দা বরুণ রায় ও পরেশ রায় নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেন বনকর্মীরা। সেই সময় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রিকোচের ঠিকানা জানতে পারে বনদপ্তর। এরপর ২০২৪ এর ১৯ মার্চ বনদপ্তর ও পুলিশের বিশেষ দল যৌথভাবে অসম রাজ্যের কামরূপ এলাকা থেকে রিকচকে গ্রেপ্তার করে। সেই সময় অভিযানে নেমে চক্রের আরেকজন শার্প শুটার লেকেন বসুমাতা'কে গ্রেপ্তার করেছিল বনদপ্তর। তবে বিচার চলাকালীন ২০২৪ এর শেষ দিকে জেলবন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর ২০২৪ সালের জুন মাসে লুকাস বসুমাতা নামে চক্রের আরেক পান্ডেকে লেপার্ডের চামড়া সমেত গ্রেপ্তার করে বনদপ্তর। সেই মামলায় লুকাস বসু মাতা'কে ৬ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। বর্তমানে সে জেলবন্দি রয়েছে। 

    হাতির দাঁতের মামলায় বনদপ্তরের তরফে রিকোচ সহ চারজনের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণ হত্যার আইনে মামলা রুজু করা হয়েছিল। এদিন সাক্ষ্য প্রমাণ দেখে আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রেম দর্জি মুক্তান মামলায় জড়িত বাকি তিন অভিযুক্তকে চার বছর জেল হেফাজত ও নগদ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রিকোচ জলপাইগুড়ি আদালতের নির্দেশে বন্যপ্রাণ হত্যার অন্য মামলায় গত এক বছর থেকে জেলেবন্দি রয়েছে। সেই কারণে তাকে আরও একবছর জেল হেফাজত ও নগদ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত। 

    জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ মাস জেলের ঘোষণা করেন বিচারক। বন্যপ্রাণ হত্যার কিংপিন জেলবন্দি হওয়ায় অনেকটাই স্বস্তিতে বন কর্তারা। উত্তরবঙ্গ তথা অসমের বিখ্যাত চোরা শিকারি চক্রের মূল পান্ডা রিকোচ জেলবন্দি হওয়ায় এবার কি থামবে চোরা শিকার? সেই উত্তরই খুঁজছে বনদপ্তর থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা।
  • Link to this news (আজকাল)