• স্যর-ম্যাডামদের ফেরত চেয়ে মিছিল করল পড়ুয়ারা
    এই সময় | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, লালগোলা: এতদিন যে মাস্টারমশাই–দিদিমণিরা ওদের পড়িয়েছেন, তাঁদের না–থাকা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ওরা। সেই মাস্টারমশাই–দিদিমণিদের ওরা ফিরে পেতে চায়। সেই দাবিতে মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা ব্লকের শেখালিপুর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা শনিবার সকালে মিছিল বার করল। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রী ওই মিছিলে যোগ দেয়।

    রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই স্কুলের ১০ জন শিক্ষক–শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরদিন শুক্রবার, ৫ এপ্রিল থেকে ওই শিক্ষক–শিক্ষিকারা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু পড়ুয়ারা এটা মেনে নিতে পারছে না। এ দিন স্কুল ইউনিফর্ম পরেই তারা মিছিল বার করে। মিছিলের স্লোগান এবং প্ল্যাকার্ড–ব্যানার–ফেস্টুনে ছিল— ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

    স্কুল সূত্রের খবর, ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেনির পড়ুয়াদের একাংশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এ দিন মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলের ব্যানার ও ফেস্টুন বানানোর খরচ পড়ুয়ারাই দিয়েছে নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, চাঁদা তুলে। মিছিলে যোগ দেওয়া পড়ুয়াদের অন্যতম আখতারা খাতুনের কথায়, ‘স্কুলের ওই দিদিমণি, মাস্টারমশাইরা চলে যাওয়ায় আমাদের মন খারাপ। ওঁদের স্কুলে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই, আমরা মিছিল বার করেছি।’

    লালগোলার ওই স্কুল এ দিন খোলা ছিল। মিছিলে থাকা পড়ুয়ারা এ দিন সকালে যে যার বাড়ি থেকে স্কুলের গেটের সামনে জড়ো হয়, তবে তারা স্কুলে ঢোকেনি। স্কুল গেটের সামনে থেকে মিছিল বার করে তারা যায় লালগোলা বিডিও অফিস পর্যন্ত। মিছিলে যোগ দেওয়া আর এক জন পড়ুয়া বকুল সিংহ বলল, ‘স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীকে মিছিলে হাঁটতে বলা হয়েছিল। যাদের ইচ্ছে হয়েছে, তারা মিছিলে হেঁটেছে। আমাদের ইচ্ছে ছিল, লালগোলার বিডিও-র সঙ্গে দেখা করে আমাদের ওই দাবি তাঁকে জানানোর। কিন্তু বিডিও ছিলেন না।’

    লালগোলার বিডিও দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই শিক্ষক–শিক্ষিকাদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। তবে স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষিকাদের নিয়ে ওই ছাত্রছাত্রীদের যে আবেগ, তাকে আমি সম্মান জানাচ্ছি।’

    ওই স্কুলের পড়য়ার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। তাদের একাংশের এ দিনের আন্দোলন–কর্মসূচি প্রসঙ্গে লালগোলার শেখালিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এস সারাফি বলেন, ‘পড়ুয়ারা নিজেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওই মিছিল বার করেছিল বলে শুনেছি। ওই মিছিলের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকদের কোনও সম্পর্ক নেই। মিছিলে যারা হেঁটেছে, তারা এ দিন স্কুলে আসেনি।’

    তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিল হওয়ায় স্কুলের সুষ্ঠু পঠনপাঠন ব্যাহত হবে বলে প্রধান শিক্ষক স্বীকার করে নিচ্ছেন। ওই ১০ জনের নিয়োগ বাতিল হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষিকার সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ক্লাসে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের যেমন পড়াতে হয়, তেমনই তার পাশাপাশি স্কুলের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ থাকে শিক্ষক–শিক্ষিকাদের। এখন সে সব কাজের ক্ষেত্রেও অসুবিধের মুখে পড়তে হবে। জানি না, কী ভাবে সব দিক সামাল দেবো।’

  • Link to this news (এই সময়)