• চার জন বিজ্ঞান শিক্ষকেরই চাকরি গিয়েছে, পড়াবে কে? অসহায় প্রধান শিক্ষক
    এই সময় | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সুমন ঘোষ ■ কেশপুর

    কে পড়াবেন ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, অঙ্ক? সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে প্রধান শিক্ষককে। সুপ্রিম–নির্দেশে স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের চার শিক্ষকেরই চাকরি গিয়েছে। গত ৩ এপ্রিলের পরে আর তাঁরা স্কুলে আসছেন না। পড়ুয়ারা রোজ স্কুলে এলেও বিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস নেওয়ার কেউ নেই। ঘুম উড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সুরেশ পড়িয়া। কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। এ দিকে, পড়ুয়াদের দাবি, ফিরিয়ে আনা হোক তাঁদের শিক্ষকদের। বেশির ভাগ পড়ুয়াদের গৃহশিক্ষক নেই।

    অসহায় প্রধান শিক্ষক সুরেশ বলেন, 'নিরুপায় হয়ে শিক্ষকদের ফাঁকা চেয়ার দেখছি। কিছু বুঝতে পারছি না। ভেবেছি প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করব, যদি আপাতত ক্লাসগুলো ওঁরা নেয়। না-হলে কিছু করার নেই। হয়তো নতুন শিক্ষাবর্ষে আর কোনও ছাত্র ভর্তি করতে পারব না।' তারপরেই জুড়লেন, 'প্রাক্তনীরা হয়তো কথা ফেলতে পারবে না। কিন্তু দিনের পর দিন কী ভাবে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে বলি ওঁদের?' স্কুলে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার খাতাই বা দেখবেন কারা? তা নিয়েও েভবে কুল পাচ্ছেন না তিনি।

    মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিন এগিয়ে আসছে। সায়েন্সের কোনও শিক্ষক না থাকলে নতুন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র–ছাত্রীদের কী ভাবে ভর্তি নেবেন তিনি, চিন্তায় সুরেশ। কেশপুরের গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের ছাত্র সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। শিক্ষক ছিলেন ১৫ জন। তার মধ্যে চার জনের চাকরি গিয়েছে। প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের শিক্ষক। ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি অঙ্ক করাতেন। স্কুলে এই বিষয়গুলির দ্বিতীয় কোনও শিক্ষক নেই। তাঁদের উপরে নির্ভরশীল ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগ। ৮৫-৯০ জন ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর ভর্তি হয়।

    প্রধান শিক্ষক বলেন, 'মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আর বেশি দেরি নেই। স্কুলে ভর্তির জন্য এখন থেকেই অনেকে যোগাযোগ করছেন। তাদের কী বলব? এ যন্ত্রণা বোঝানোর নয়।' যে সমস্ত ক্লাসে ছাত্র বেশি থাকার কারণে সেকশন ভাগ করেছিলেন, সেই সমস্ত সেকশন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, 'এ ছাড়া আর উপায় কী। কিন্তু তাতেও কী উচ্চ মাধ্যমিক চালাতে পারব।' এই স্কুল বাল্যবিবাহ রোধে জাতীয় স্তরে একবার ও রাজ্যস্তরে পরপর দু'বার পুরস্কৃত হয়েছে। স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের অফিসে এসে জানিয়েছে, 'আমরা এতসব বুঝি না। আমাদের ৩ জন স্যর আর ১ জন ম্যাডামকে স্কুলে ফিরিয়ে আনুন, আপনি পারবেন।'

    কেশপুরেরই কাঞ্চনতলা হাইস্কুলেও একই চিত্র। যেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ানো হতো কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন এবং এডুকেশন। ওই স্কুলের তিন জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন এবং এডুকেশনের শিক্ষকও। প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, 'ওই বিষয়ের আর কোনও শিক্ষক আমাদের স্কুলে নেই। জানি না এ বার কী করব। দেখি শিক্ষা দপ্তর কী সিদ্ধান্ত নেয়। না হলে হয়তো ওই বিষয়গুলি আর পড়ানো সম্ভব হবে না।'

  • Link to this news (এই সময়)