• সরকারি জমি বেচেই দ্রুত উত্থান কামারহাটির তৃণমূল নেতা রেহানের
    এই সময় | ০৬ এপ্রিল ২০২৫
  • অশীন বিশ্বাস ■ বেলঘরিয়া

    বিহারের ট্রাক চালক থেকে এলাকার সরকারি জমির নিয়ন্ত্রক। রকেট গতিতে আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি কায়েম করেছিল বেলঘরিয়ায় খুন হওয়া মহম্মদ এনায়েতুল্লা ওরফে রেহান। সরকারি জমি ও নয়ানজুলি ভরাট করে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ওভারব্রিজের নীচের অংশও স্কোয়্যার ফুট দরে বিক্রি করা হয়েছিল। আর ওই টাকার ভাগ বাটোয়ারাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল শত্রুতা।

    তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওই সাম্রাজ্য দখলের লড়াইয়ে এক সময়ের আশ্রয়দাতাদের হাতেই খুন হতে হয়েছে রেহানকে। এই খুনের কাণ্ডে পুলিশ এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকি এক শুটার এখনও অধরা। মঙ্গলবার রাতে কামারহাটি পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজীবনগরে তৃণমূল কর্মী মহম্মদ এনায়েতুল্লা ওরফে রেহান খুন হন। তার আদত বাড়ি বিহারে।

    বেলঘরিয়ায় ট্রাক চালক হিসেবে প্রথম পা রেখেছিলেন রেহান। কয়েক বছর আগেও তিনি রাজীবনগরে এক্সপ্রেসওয়ের নীচে ট্রাক রাখতেন। সেই সূত্রে ওই এলাকার তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সুশান্ত রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। এর পর একদা আশ্রয়দাতাকেই এলাকা থেকে সরানোর ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেন রেহান। সুশান্তকে মারধর করে এলাকা থেকে তাড়ানোর পিছনেও তাঁর ভূমিকা ছিল। সুশান্তকে জেলও খাটতে হয়। কিন্তু কীসের মোহে এলাকার দখল নিয়েছিলেন রেহান?

    এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে পিছনে রয়েছে সরকারি জমি বিক্রির কাঁচা টাকা। এই রাজীবনগরের উপর দিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে গিয়েছে। পাশ দিয়ে গিয়েছে শিয়ালদহ-ব্যারাকপুর, শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার রেল লাইন ও দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর লাইন। রেল ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ওই ফাঁকা জমি বিক্রি করা ছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীদের মূল আয়ের উৎস। এক্সপ্রেসওয়ের পিলারের নীচে ঘুপচি টিনের ঘরে থাকা এক পরিবারের সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্কোয়্যার ফুটের হিসেবে আমার থেকে টাকা নিয়েছে। কয়েক হাত জায়গার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’

    তবে ভয়ে দাদাদের নাম তাঁরা বলতে চাননি। ফ্লাইওভারের অদূরে ফাঁকা জমি কিনেছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি ভয় জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘ওই জমি রেহানদের থেকে চার লাখ কাঠা দরে কিনেছি। আমরা কাজ করে খাই। এখানে কম টাকায় পেয়ে সামান্য জমি কিনে টিনের চালা বানিয়েছি।’

    তবে ভয়ে দাদাদের নাম তাঁরা বলতে চাননি। ফ্লাইওভারের অদূরে ফাঁকা জমি কিনেছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি ভয় জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘ওই জমি রেহানদের থেকে চার লাখ কাঠা দরে কিনেছি। আমরা কাজ করে খাই। এখানে কম টাকায় পেয়ে সামান্য জমি কিনে টিনের চালা বানিয়েছি।’ মাস ছয়েক আগ রেহান নিজের জন্য যে বাড়ি তৈরি করেছিলেন তাও কয়েক বিঘা নয়ানজুলির একাংশ ভরিয়ে। প্রতিটি বাড়িতে আলো ও পাশের কেএমডিএ–র জলের লাইন থেকে জলের অস্থায়ী ব্যবস্থাও হয়েছিল রেহানদের সৌজন্যে।

    কিন্তু এই কারবারে রেহান ও তার দলবলের বিপুল আয় হলেও বঞ্চিত ছিল সুশান্তর দলবল। তারা সুযোগ খুঁজছিল প্রতিশোধের। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এলাকা পুনর্দখলের জন্য রেহানকে সরিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে সুশান্তের দলবল। যার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রেহানের উত্থান, সেই কামারহাটি পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার দেবযানী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘রেহান দলের সক্রিয় কর্মী। রেল লাইনের ধারে তো প্রচুর বাড়িঘর থাকে। এখানেও হয়তো তেমন ছিল বলেই ভেবেছি। সরকারি জমি বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই।’ সত্যিই কি কাউন্সিলার কিছুই জানতেন না? স্থানীয়রা মুখ টিপে হাসছেন সে কথা শুনে।

  • Link to this news (এই সময়)