এই সময়, রায়গঞ্জ: স্বপ্ন আছে আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু তাকে সংসারের গণ্ডিতে বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন অভিভাবকরা। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলো। প্রধান শিক্ষিকাকে চিঠি লিখে বিয়ে রুখে দিল ষোড়শী।
রায়গঞ্জের দেবীনগর প্রমোদাসুন্দরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে মেয়েটি। এই বয়সেই তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। আজ, রবিবারই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অনিচ্ছুক কিশোরী স্কুলের হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেল। বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এই নাবালিকার।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কিশোরীর বাড়ি। সে পড়াশোনা করতে চাইলেও অভিভাবকরা বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। সেই মতো পাত্রও জোগাড় হয়ে যায়। বিয়ের দিন ঠিক হয় ৬ এপ্রিল। তার আগে বুদ্ধি করে মেয়েটি চিঠি লেখে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে। তিনি মধ্যস্থতা করে বিয়ের পিঁড়িতে বসা থেকে রেহাই দেন তার ছাত্রীকে। নাবালিকার চিঠি পেয়ে প্রধান শিক্ষিকা মালঞ্চ গঙ্গোপাধ্যায় ফোন করেন তার বাবাকে। স্কুলে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে চলে আসে মেয়েটি। স্কুলেই ছাত্রীর বাবাকে বোঝান প্রধান শিক্ষিকা, কেন ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
শারীরিক ও মানসিক কারণে শুধু নয়, নাবালিকার বাবাকে মালঞ্চ বুঝিয়ে দেন, আইনের চোখে বাল্যবিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ। এ জন্য তাঁকে সাজা পেতে হতে পারে। প্রধান শিক্ষিকার কথায় নিজের ভুল বুঝতে পারেন নাবালিকার বাবা। তিনি যুক্তির সঙ্গে সহমত হলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিয়ে বন্ধ করলে তাঁকে গ্রাম ও পরিবারে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীর বাবাকে আশ্বস্ত করেন, এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপরে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ ও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নাবালিকার গ্রামে যান। গ্রামবাসীকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বোঝানোর পাশাপাশি সতর্কও করা হয়।
বিয়ের হাত থেকে রেহাই পেয়ে খুবই খুশি নাবালিকা। বলে, ‘আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। এখন বিয়ে করব না। সে কথা ম্যাডামকে জানিয়েছিলাম। তারপর ম্যাডাম বাবাকে বুঝিয়েছেন। গ্রামে পুলিশ এসেছিল। গ্রামের মানুষদের আপত্তি নেই।’
মালঞ্চ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘মেয়েটি আমাকে চিঠি লিখে জানায় যে ওর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। তারপরে আমায় ফোনে যোগাযোগ করে। আমি ওদের ডেকে পাঠাই। ওরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিডিও, সবাইকে এ ঘটনার কথা বলেছি। মেয়েটি নিজে উদ্যোগী হয়ে বিয়ে রুখেছে, সেই কারণে ওকে কুর্নিশ জানাই।’ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভবানন্দ বর্মন বলেন, ‘স্কুল থেকে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি পুলিশ–প্রশাসন ও চাইল্ড লাইনের সঙ্গে কথা বলি। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়। ওঁরাও বুঝতে পেরেছেন।’