অথই জলে, এমআরআই না করিয়ে সবংয়ে রওনা চাকরিহারা তাপসের
বর্তমান | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: অসুস্থ বাবা-মা। তাঁদের চিকিৎসা খরচ। সঙ্গে ছেলের পড়াশোনা। এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়ে অথই জলে তাপস সাহু। তিনি খড়িবাড়ি হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। তাপস কোমরের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর। অর্থসঙ্কটের আশঙ্কায় নিজের এমআরআই করাতে পারলেন না তিনি। রবিবার ভাড়াবাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাসে চাপেন। ভারাক্রান্ত গলায় বলেন, এখন কী হবে, তা বুঝতে পারছি না।
এদিকে, ঘোর সঙ্কটে খড়িবাড়ি হাইস্কুল। তিনজন শিক্ষকের পাশাপাশি স্কুলের দু’জন শিক্ষাকর্মীও চাকরি হারিয়েছেন। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের পঠনপাঠন যেমন বন্ধের মুখে, তেমনই স্কুলে ঘণ্টা বাজানোর লোকও নেই। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সাধনা সাহা বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি চলে যাওয়ায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েছি। সুষ্ঠুমতো স্কুল পরিচালনা ও পঠনপাঠন চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে তাপস সাহুর বাড়ি। ২০১৮সাল থেকে তিনি খড়িবাড়ি হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক পদে যোগ দেন। সেই থেকে খড়িবাড়িতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিলেন। সবংয়ের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী ও পাঁচবছরের ছেলে রয়েছে। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বলেন, বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা। তাঁদের চিকিৎসার জন্য মাসিক খরচ প্রায় ৬হাজার টাকা। ছেলের পড়াশোনার খরচও বিশাল। এই অবস্থায় সুপ্রিমকোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়ে নিজের জন্য চিকিৎসা করানোর সাহস পাচ্ছিন না। ১০ দিন আগে আচমকা কোমরের যন্ত্রণায় আক্রান্ত হই। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অসহ্য যন্ত্রণা। এজন্য চিকিৎসক এমআরআই করতে বলেছেন। প্রয়োজন প্রায় ১০হাজার টাকা। সংসার চালানোর কথা ভেবে সেই টাকা খরচ করার সাহস পাচ্ছি না। এদিন খড়িবাড়ি থেকে সবংয়ের উদ্দেশ্যে বাসে চাপেন তাপস। আদালতের রায় ঘোষণার পরেও তিনি দু’দিন স্কুলে গিয়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন নিজের সংসার কীভাবে চালাব ভেবে কুল পাচ্ছি না। এর আগে প্রাথমিক চাকরি পেয়েও যোগ দিইনি। সেই চাকরিতে যোগ দিলে হয়তো আজকের দিনটি দেখতে হতো না। এদিকে, দুশ্চিন্তার ‘কালো মেঘে’ ঢেকে সংশ্লিষ্ট স্কুল। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫শো। এতদিন তাঁদের সামাল দিতে স্কুলে ছিলেন ২১জন শিক্ষক। তিনজন শিক্ষক চাকরিহারানোয় সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮জন। এরবাইরে গ্রুপ ‘সি’ ও ‘ডি’পদের একজন করে কর্মীর চাকরি খুইয়েছেন।