সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: রাতারাতি বড়লোক! ৫০ হাজার ফেললেই কয়েকদিনের মধ্যে এক লাখ। এক লাখ দিলে দু’লাখ। সারদা, রোজভ্যালির কাণ্ডের পর সচেতন হয়নি সাধারণ মানুষ। অনলাইনে নতুন কায়দায় গড়ে ওঠা এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে তারা। টাকা কে নিচ্ছে, কোথায় খাটাচ্ছে কিংব কোথায় লগ্নি করা হচ্ছে—সবটাই অন্ধকারে। গ্রাহকের হাতে ‘লণ্ঠন’ হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা কোড নম্বর। যার প্রতীকী নাম, ‘ট্রেজার এনএফটি’। ইতিমধ্যেই পুলিস বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা করেছে। তাতে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও মিলেছে বলে খবর। ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা আঁচ করে গ্রাহকদের সচেতন থাকার বার্তা দিয়েছে পুলিস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ট্রেজার এনএফটি’ নামক এই অদৃশ্য ফান্ড ম্যানেজারে টাকা রেখে অনেকে দ্বিগুন টাকা পেয়েছেন। তাঁরা আবার অন্যদের প্রভাবিত করে বিনিয়োগ করাচ্ছে। এক আধিকারিক বলেন, প্রতারকদের এটাই কৌশল। প্রথম দিকে তারা টাকা ফেরৎ দেয়। মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেলে তারা পাততাড়ি গুটিয়ে কেটে পড়ে। সারদা বা অন্য চিটফান্ডের ক্ষেত্রে প্রতারিতরা অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে সেই সুযোগটুকুও নেই। রাজ্যেজুড়ে এ ধরনের স্কিমে বহু সংখ্যক আমানতকারী টাকা রেখেছেন বলে খবর পেয়েছে পুলিস। কোনও কোনও অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করানোর জন্য এজেন্ট রাখা হয়েছে। তারা মোটা টাকা কমিশন পায়। পুলিস গ্রাহকদের সতর্ক করছে এই বলে—কোথায় কি কাজে টাকা দেওয়া হচ্ছে তা না জেনে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। অনেকে না জেনে ‘ক্রিপ্টো কারেন্সি’তেও টাকা ঢালছে। এটাও আর্থিক প্রতারণার একটি অদৃশ্য ফাঁদ বলে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ক্রিপ্টো কারেন্সির উপর সরকার কিংবা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও সিলমোহর নেই। ফলে, এসব ক্ষেত্রে প্রতারিত হলে কারও কিছু করার থাকবে না। কারণ, টাকা বিনিয়োগ করার কোনও প্রমাণপত্র গ্রাহকের কাছে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের ক্রিপ্টো কারেন্সি বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। রবিবার এক বিনিয়োগকারী বলছিলেন, ‘এক বন্ধুর পরামর্শে কয়েক হাজার টাকা একটা ক্রিপ্টো কারেন্সি বা এপপ্স-এ জমা করেছি। এক মাসে দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কি হবে জানা নেই। অন্য গ্রাহক জোগাড় করতে পারলে বাড়তি কমিশন দেওয়া হবে।’
পুলিস জানিয়েছে, জনগণকে সচেতন করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া কর্মশালা করেও সচেতন করা হচ্ছে। তারপরও অনেকে ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, ‘না জেনে কোথাও টাকা বিনিয়োগ করলে বিপদ হতে পারে। তা নিয়ে লাগাতার প্রচার করা হচ্ছে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে।’
পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এপপ্স-এ টাকা রেখে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। তারপরও অনেকে শিক্ষা নেয়নি। সম্প্রতি, প্রতারকরা প্রতরণার আদব-কায়দা বদলেছে। তারই জাল বিস্তার করে চলছে ঠকানোর কারবার। পূর্ব বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলাতে লক্ষধিক ব্যক্তি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁদের দিন কাটছে এখন চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে।