সম্প্রীতির মিছিল তৃণমূলের, রামনবমীর শোভযাত্রায় শক্তি প্রদর্শন বিজেপির
বর্তমান | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে রবিবার রামনবমীর শোভাযাত্রায় পা মেলালেন শাসকদলের সাংসদ, বিধায়ক সহ নেতা-নেত্রীরা। শোভাযাত্রায় শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করল বিজেপি। বীরভূম জেলার নানা প্রান্তে অস্ত্র নিয়ে মিছিলও হয়েছে। সিউড়ি শহর ও রামপুরহাটের পৃথক দু’টি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে। মহিলা ও নাবালকদেরও হাতেও ছিল অস্ত্র। কিছু জায়গায় অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিস জানিয়েছে। পুলিসের দাবি, শোভাযাত্রায় খেলনা বন্দুক ছিল। জেলার পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হবে।
এদিন পুলিসের তরফে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাড়তি পুলিসও পথে নামে। আকাশে ড্রোন ওড়ানো হয়। এদিন সকালে সিউড়িতে রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। শান্তির বার্তা নিয়ে শহরের বেণীমাধব মোড় থেকে শুরু হওয়া ওই শোভাযাত্রায় মহিলা ঢাকিদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। সকাল থেকেই নিয়ম ভাঙার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সিউড়ির কড়িধ্যায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের তরফে আয়োজিত শোভাযাত্রায় দেদার অস্ত্রের প্রদর্শনী চলে। শোভাযাত্রায় বীরভূম সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর গড়াই সহ অন্যান্যদের পা মেলাতে দেখা যায়। সেইসঙ্গে সিউড়ি শহরে শুড়িপুকুরপাড়া মহাবীর উন্নয়ন সমিতির শোভাযাত্রায়ও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক যুবককে উল্লাস করতেও দেখা গিয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রামপুরহাটেও। মহিলাদের হাতেও অস্ত্র দেখা যায়।
নানা বিতর্কের মাঝেও এদিন জেলার নানা প্রান্তে সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়েছে। মুরারই ও নলহাটিতে শাসক-বিরোধী নেতৃত্বকে দূরত্ব বজায় রেখে শোভাযাত্রায় পা মেলাতে দেখা গিয়েছে। দুবরাজপুরে জয় শ্রীরাম সেবা সমিতির তরফে আয়োজিত শোভাযাত্রায় জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পীযূষ পাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক টুটুন নন্দী সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরাও পা মেলান।
সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে মুরারইয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রার প্রথম সারিতে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মোশারফ হোসেন, সেরাজুল ইসলাম খান সহ অন্যান্যরা। রামপুরহাটে রেলের চ্যাম্পিয়ন গ্রাউন্ড থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় তৃণমূল বিজেপি একসঙ্গে না হাঁটলেও সকলে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। নানুর বিধানসভার কসবা পঞ্চায়েতের বেরুগ্রামে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তাঁর হাতে ত্রিশূল তুলে দেন উদ্যোক্তারা।
লাভপুরের সতীপীঠ ফুল্লরা মন্দির সংলগ্ন মাঠে এদিন রামনবমী পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ। বোলপুরে রামনবমী উপলক্ষ্যে দিনভর আয়োজিত মিছিল, পদযাত্রায় তৃণমূলের সকল স্তরের নেতারা শামিল হয়েছিলেন। এদিন বিকেলে তৃণমূলের তরফে আয়োজিত পদযাত্রায় জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, কোর কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুব্রত বলেন, যে কৃষ্ণ সেই রাম। রাম সবারই ভগবান। গোটা বীরভূম জেলাজুড়ে রামনবমী উদ্যাপন হয়েছে। কোনও হিংসা হানাহানি হয়নি।
রামনবমীর শোভাযাত্রায় অস্ত্রের ব্যবহারের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, কোনও দল ভেবেছিল অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করবে। তবে পুলিসের তত্পরতায় সেই আশায় জল পড়েছে। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দীপক দাস বলেন, এই অস্ত্র সনাতনীদের অলঙ্কার। এসব কাউকে মারার জন্য নয়।