• গান শিখিয়ে সংসার চালান বাবা, ছেলে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ পুরস্কার জিতে ফিরতেই শুভেচ্ছা-সংবর্ধনার বন্যা
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • চাঙ্গুয়াল থেকে মুম্বই, দূরত্বটা অনেকটা। কিন্তু বাংলার ম্যাপে এই অনামী গ্রামটাকে এখন চিনে নিয়েছে দেশের গানপ্রেমী শ্রোতারা। সৌজন্যে শুভজিৎ চক্রবর্তী। নিজের সুরেলা কণ্ঠ আর সুরের দৃঢ়তায় শুভজিৎ মুগ্ধ করেছেন আসমুদ্র হিমাচলকে। তাই 'ইন্ডিয়ান আইডল ২০২৫' চূড়ান্ত তিনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ভোট ও নম্বরের বিচারের পেলেন সেকেন্ড রানআপ-এর পুরস্কার। তাই মুম্বই জয় করে শুভজিৎ ফিরতেই আনন্দ বাঁধ মানছে না খড়গপুর তথা চাঙ্গুয়ালের।

    সদ্য সমাপ্ত 'ইন্ডিয়ান আইডল ২০২৫'- এ দ্বিতীয় স্থানাধিকারী শুভজিৎ চক্রবর্তী। শুভজিৎ খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল এলাকার বাসিন্দা। শনিবার সকালে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আর শনিবার রাতে খড়্গপুর শহরের বিএনআর ময়দানে একটি দিন-রাতের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে শুভজিৎ-কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অজিত মাইতি, প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মূল উদ্যোক্তা প্রদীপ সরকার প্রমুখ। মঞ্চে সংবর্ধনা নেওয়ার পর দর্শকদের অনুরোধে, খালি গলায় 'সুরিলি আঁখিওবালে' গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেন শুভজিৎ। ইন্ডিয়ান আইডলে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী শুভজিতের কন্ঠে এই গানটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে।

    খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল গ্রামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শুভজিতের। বাবা কৃষ্ণদাস চক্রবর্তী গানের শিক্ষক। গানের গৃহশিক্ষকতা (টিউশনি) করেই চলে সংসার। মা বন্দিতা চক্রবর্তী গৃহিণী। একসময় তাঁরা (শুভজিতের বাবা ও মা) যাত্রাপালার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল শুভজিতের। গানের হাতেখড়ি হয় বাবার হাত ধরেই। অল্প বয়স থেকেই বাবার কাছ থেকেই আধুনিক গানের পাশাপাশি লোকসঙ্গীতের তালিম নিতেন তিনি। খুব ছোট বয়সে স্টেজে উঠে গানও করেছেন শুভজিৎ।

    পরবর্তী সময়ে সংসারে অভাব থাকলেও গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অটুট থেকেছে। পরে কৃষ্ণদাস বাবু একটি বাউলের দল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দলেও গান গাইতেন শুভজিৎ। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির সময় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল গোটা পরিবার।

    গানের টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুরু হয় আর্থিক সংকট! এরপরই পানের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করে চক্রবর্তী পরিবার। সেই সময় দোকানেও বসতেন শুভজিৎ ও তাঁর মা। পানের দোকানে বসেই গলা ছেড়ে গানের সাধনা করতেন এই গুণী তরুণ।

    সেই শুভজিৎই জনপ্রিয় সর্বভারতীয় রিয়েলিটি শো (ইন্ডিয়ান আইডল)-তে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে শুধু পরিবার নয় গোটা গ্রাম ও জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। শনিবার বাড়ি ফেরার পরই তাঁকে রাজকীয় সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন,‘শুভজিৎ শুধু মেদিনীপুর বা খড়্গপুরের গর্ব নয়, সমগ্র বাংলার গর্ব। এই সবে ২৫ বছর বয়স ওর। ভবিষ্যতে ও আরও অনেক সাফল্য অর্জন করবে।’

  • Link to this news (এই সময়)