• নন্দীগ্রামের মাঠে লড়া আটপৌরে সেই মীনাক্ষীই ভরসা ’২৬-এর যুুদ্ধে
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর হাই প্রোফাইল ভোট–যুদ্ধের সময়ে রাজ্যের মানুষ প্রথমবার মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় নামে তরুণীর কথা জানতে পারেন। ডিওয়াইএফআই–এর রাজ্য সভাপতি পদে থাকলেও মীনাক্ষী তখন যুবনেত্রী হননি। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, বাম কর্মী–সমর্থকদের অনেকেই বর্ধমানের এই তরুণীর কথা জানতেন না।

    ২০২১–এ মমতা–শুভেন্দু দ্বৈরথে মীনাক্ষীর জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের মুখ হিসেবে তাঁর উত্থান শুরু হয়। নন্দীগ্রামের সেই ভোট–যুদ্ধের চার বছরের মাথায় মীনাক্ষী সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেলেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নবীন প্রজন্মের মুখ হিসেবে যাঁকে প্রজেক্ট করে সিপিএম তরুণ প্রজন্মকে পাশে টানতে চাইছে। ২০২৪–এর লোকসভা নির্বাচনে মীনাক্ষী কোথাও প্রার্থী না হলেও সিপিএম তাঁকে টানা প্রচারে ব্যবহার করেছিল। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে মীনাক্ষী ঠাঁই পাওয়ায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মীনাক্ষী সিপিএমের প্রচারের অন্যতম মুখ হতে চলেছেন বলে দলের নেতাদের পর্যবেক্ষণ।

    এই কাজ কতটা চ্যালেঞ্জের? মীনাক্ষীর উত্তর, ‘কমিউনিস্ট পার্টি সব সময়ে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেই এগিয়ে যায়। নবী‍ন প্রজন্ম বামপন্থীদের পাশে নেই, এটা ঠিক নয়। তাঁদের রুটি–রুজির লড়াইয়ে আমরা সব সময়ে পাশে রয়েছি। আমাদের দলে কোনও একজন ব্যক্তি নন, সব বয়সের সদস্যরা একসঙ্গে লড়াই করেন।’

    দীর্ঘ দশকের পর দশক সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি মানেই পক্ককেশ অভিজ্ঞ নেতাদের ভিড়ের ছবি। সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত ঘোষের মতো তরুণ প্রজন্মের নেতারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকলেন। সিপিএমের বয়স–বিধির কারণে সূর্যকান্ত মিশ্র, অমিয় পাত্র, রবীন দেব, রেখা গোস্বামী, অঞ্জু কর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ গিয়েছেন। এই নেতানেত্রীদের বদলে মীনাক্ষী, দেবব্রতর সঙ্গে সমন পাঠক, কনীনিকা ঘোষ, সৈয়দ হুসেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে একমাত্র সৈয়দের কাঁচাপাকা চুল রয়েছে। সমন পাঠক কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়ায়, দীর্ঘদিন পরে উত্তরবঙ্গের কোনও সিপিএম নেতা দলের হাই প্রোফাইল এই কমিটিতে ঢুকতে পারলেন।

    মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে মানিক সরকারের নেতৃত্বে গঠিত প্রেসিডিয়ামে মীনাক্ষী ঠাঁই পেয়েছেন দেখেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের একাধিক নেতা বুঝতে পেরেছিলেন ডিওয়াইএফআই–এর রাজ্য সম্পাদকের আরও উত্থান হতে চলেছে। কারণ ২০২১–এ নন্দীগ্রামের সেই ভোট–যুদ্ধের পরে আটপৌরে, মফস্‌সলের টানে কথা বলা মীনাক্ষীকে পরিকল্পিত ভাবে প্রজেক্ট করতে শুরু করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের ছাত্র–যুবদের বিভিন্ন মিছিল–মিটিংয়ে মীনাক্ষীই প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন। আনিস খানের মৃত্যু থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে মীনাক্ষীকে ছাত্র–যুব ব্রিগেডের নেত্রী হিসেবে এগিয়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। যে দিন আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের দেহ নিশ্চুপে বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল হাসপাতাল থেকে, সে দিন সেই গাড়ির পথ আটকেছিলেন এই মীনাক্ষীই।

    মীনাক্ষীকে সামনে রেখেই ২০২৪–এর লোকসভা ভোটের আগে বাম ছাত্র–যুবরা ব্রিগেডে ইনসাফ সমাবেশ করেছিল। ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশেও সেলিমদের মতো পোড়খাওয়াদের পাশে অন্যতম প্রধান বক্তা ছিলেন মীনাক্ষী। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাই পরিকল্পিত ভাবেই মীনাক্ষীর মতো নতুন প্রজন্মকে সামনের সারিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বামপন্থীদের সমর্থন ফেরানোই এঁদের মূল লক্ষ্য হবে।’

    গত শতকের ছয়–সাতের দশকে দীনেশ মজুমদার, বিমান বসু, সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী–র মতো একদল ছাত্র–যুব লাগাতার জঙ্গি আন্দোলন করে সিপিএমের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিলেন। মীনাক্ষীরা সিপিএমের মরা–গাঙে জোয়ার আনতে পারবেন কি না, ভবিষ্যৎ তার উত্তর দেবে।

  • Link to this news (এই সময়)