• স্কুল থেকে অতিরিক্ত শিক্ষক সরিয়ে নিন প্লিজ়, আর্জি হেডস্যরের
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    স্কুলে স্কুলে এখন শিক্ষক সঙ্কট। আকাল গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীরও। কোথাও ক্লাস শুরুর ঘণ্টা বাজাতে দেখা যাচ্ছে প্রধান শিক্ষককেই। কোথাও শিক্ষকহীন ক্লাসে বই বার করে নিজেরাই পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা।

    আর এই রাজ্যেই এমন একটি স্কুল রয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকায় কার্যত তিতিবিরক্ত সেখানকার প্রধান শিক্ষক। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের ভেটিয়াচন্ডী হাইস্কুলের সেই প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার সীট–এর সাফ কথা, ‘অতিরিক্ত শিক্ষকের জন্য স্কুলে নানা রকমের সমস্যা হচ্ছে। এই অতিরিক্ত শিক্ষক তুলে অন্য স্কুলে পাঠিয়ে দিতে আমি আগেই শিক্ষামন্ত্রী, কমিশন, শিক্ষা দপ্তর, জেলাশাসক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আবেদন জানিয়েছি। এখন তো সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি চলে গিয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে তো শিক্ষকদের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যদি আমাদের স্কুল থেকে অতিরিক্ত শিক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে সেই সব স্কুলের যেমন সুবিধে হবে, তেমনই আমরাও বেঁচে যাব। স্কুলের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শিক্ষকে-শিক্ষকে গোলমাল মিটবে।’

    অতিরিক্ত শিক্ষকদের নিয়ে কী সমস্যা হচ্ছে?

    প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, কাজের চেয়ে অকাজ হচ্ছে বেশি। একে অন্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়শই অভিযোগ করছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই গোলমাল মেটাতে বহুবার পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছে স্কুলকে। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘একসময়ে মাসের প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পুলিশ স্কুলে আসছিল! মামলা পর্যন্ত হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গোলামালের কারণে।’ এখন সে সব সমস্যা কিছুটা মিটলেও, অতিরিক্ত শিক্ষক থাকার সমস্যা মেটেনি। প্রধান শিক্ষকের আর্জি — ‘প্লিজ় সরিয়ে নেওয়া হোক স্কুলের অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।’

    জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন সামন্ত বলেন, ‘কী করা হবে তা ভেবে দেখতে হবে। পরিস্থিতি দেখে দপ্তরের অনুমতিক্রমে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হবে।’

    জানা গিয়েছে, খড়্গপুর-১ ব্লকের এই স্কুলে (উচ্চ মাধ্যমিক) এখন ছাত্র সংখ্যা খাতায় কলমে ৪০০–র কিছু বেশি। নিয়মিত স্কুলে আসে ২৫০–৩০০ পড়ুয়া। স্থায়ী শিক্ষক ২২ জন। তিনজন পার্শ্ব শিক্ষক, চারজন শিক্ষাকর্মী। স্কুলে নিয়মিত গণ্ডগোলের কারণে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান না অভিভাবকেরা। স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। গত বছর একাদশে ভর্তি হয়েছিল মাত্র ৩২ জন পড়ুয়া। এখন দ্বাদশে আছে ২৮ জন। চারজন উধাও।

    এই হচ্ছে স্কুলের অবস্থা!’ এক শিক্ষিকার কথায়, ‘এত শিক্ষক-শিক্ষিকার কোনও কাজ নেই। স্টাফ রুমে বসে বসে একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। অবিলম্বে বাড়তি শিক্ষক সরিয়ে অন্য স্কুলে দেওয়া।’

    অন্য মতও আছে। এক শিক্ষক বলছেন, ‘যাঁরা স্কুলের ভালো চান না, তাঁরাই অতিরিক্ত শিক্ষকদের সরিয়ে নিতে বলছেন। দপ্তর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাই নেবে।’

  • Link to this news (এই সময়)