কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি যাবে না বলে আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদের কাজে যোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের কাছে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও বিভ্রান্তি এবং দ্বিধা নিয়েই সোমবার নেতাজি ইন্ডোর ছেড়েছেন চাকরিহারাদের অধিকাংশ।
মুর্শিদাবাদ মহারানি কাশীশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের মৌমিতা দত্ত বলেন, ‘আমরা নিজেরাও ধোঁয়াশায়। আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তবে উনি কাল থেকে আমাদের কাজে যোগ দিতে বলেছেন। আমাদেরই যাতে বহাল রাখা যায়, তার চেষ্টা করবেন উনি। রিভিউ পিটিশনের ফলাফল যদি নেতিবাচকও হয় তাহলেও যাতে আমাদেরই চাকরিতে বহাল রাখা যায়, তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
অন্য এক চাকরিহারা পিয়ালি গড়াই ইন্ডোর থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘আশ্বাস তো উনি আগেও দিয়েছিলেন। যার জন্য আমাদের কাছে নিয়োগপত্র থাকা সত্ত্বেও আজ ছয় বছর পর আমরা চাকরিহারা। মুখের কথায় আমরা কোনও রকম ভরসা রাখতে পারছি না। যতক্ষণ না হাতে কোনও কাগজ পাচ্ছি, ততক্ষণ ভরসা রাখা সম্ভব নয়। আমরা তো এখন SSC, সুপ্রিম কোর্ট আর রাজ্য সরকারের কাছে টেনিস বলের মতো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই। দু’মাসের আশ্বাস সান্ত্বনা হতে পারে না। আমরা অনেক কষ্ট করে এই চাকরি পেয়েছি, আজীবন চাকরিটা রাখতে চাই।’
‘যোগ্যতার ভিত্তিতে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি।’ নেতাজি ইন্ডোর থেকে বৈঠক শেষে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বেরিয়ে এই কথাই বলছেন অনেকে। কারও মুখে আবার ভরসার হাসি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন কেউ কেউ। সুপ্রিম কর্টের রায়ে অখুশি সকলেই, তবে তাঁরা বলছেন, আইনের ঊর্ধ্বে তো কেউ যেতে পারে না।
পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট স্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক অরুণিতা কুণ্ডু বলেন, ‘টার্মিনেশন লেটার স্কুলে স্কুলে পাঠানো হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন স্কুলে যেতে। উনি যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানতে চাইবেন। আমরা যোগ্য, তাহলে কেন স্কুলে যাব না? নতুন করে আশায় বুক বাঁধছি। ওঁর কথায় ভরসা রাখছি।’
আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘এ কোথাকার ন্যায়বিচার? পুলিশের চাকরি চলে গেলে যদি তাঁদের বলা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে, তাঁরা করবেন? সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের রায় মানি না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাসা ভাসা কথাও মানি না। আমরা সন্তুষ্ট নই।’
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার এক স্কুলের চাকরিহারা বলেন, ‘সম্মানহানি হয়েছে। স্কুলে যেতে, স্টাফরুমে গিয়ে দাঁড়াতে লজ্জা লাগবে।’
এই সময় অনলাইনের প্রতিনিধির সামনে কথা বলতে বলতে গলা ধরে এসেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ভেলামপুর হাইস্কুলের গ্রুপ ডি কর্মী বাপি মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘আমরা তো হাততালি দিতে আসিনি বক্তব্যে। রোহিত শর্মাকে যদি বলা হয় আবার নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলে ওয়ার্ল্ড কাপ জিততে তাহলে কি তিনি তা পারবেন? আমাদেরও তো বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। মেয়ে বলছে বাবা তোমার চাকরি নেই, আর স্কুলে যাব না। দিশেহারা লাগছে। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’
তথ্য সহায়তা: তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় ও বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়।